আলিপুরদুয়ার: শহরের হাইস্কুলগুলিতে অনলাইন ক্লাস আর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ভরসা। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলগুলোতে কী হবে, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। গরমের জন্য অনির্দিষ্টকাল ধরে জারি করা আগাম ছুটির ফলে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে শিক্ষামহলে। ভোটের কাজকর্মের পর ২২ এপ্রিল থেকে স্কুল খোলার কথা ভেবেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। এদিকে, শিক্ষা দপ্তর ২২ এপ্রিল থেকে ছুটি ঘোষণা করে। পঠনপাঠন ফের প্রশ্নের মুখে। এদিকে আবার সবার বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। সেই বাড়ির বাচ্চারা কী করে অনলাইন ক্লাস করবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির প্রক্রিয়াও অনেক বিদ্যালয়ে অসমাপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ। অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের যুগ্ম সম্পাদক সুমন্ত সিংহ বলেন, ‘চা বাগান এবং প্রান্তিক এলাকায় অনলাইন ক্লাস করানো সম্ভব নয়। তবে সংগঠনের তরফে সদস্যরা স্কুলগুলোতে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে স্কুল চত্বরের কাছাকাছি পড়ুয়াদের পড়ানো যায়।’
আলিপুরদুয়ার ম্যাক উইলিয়াম হাইস্কুলে শ্রেণিভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। ফলে গ্রীষ্মের ছুটির কাজ সহ বিভিন্ন বিষয় হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হবে। এছাড়া, অনলাইন ক্লাসের কথাও ভাবা হচ্ছে। ক্লাসটিচাররা নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইন ক্লাস নেবেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অনিলচন্দ্র রায় বলেন, ‘ছুটির দিনগুলিতে অনলাইন ক্লাস করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। শিক্ষিকাদের সঙ্গে এই বিষয়ে একটি ঘরোয়া বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ আলিপুরদুয়ার নিউটাউন গার্লস স্কুলে গ্রীষ্মের প্রোজেক্ট দেওয়া হয়েছে। ঘরে বসে পড়ুয়ারা সেগুলো করবে। স্কুল খুললে দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষা হবে। করোনা পরিস্থিতির সময় থেকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে কোনও বিষয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর মিলবে। প্রধান শিক্ষিকা কুসুমিকা মৈত্র বলেন, ‘প্রতিটি বিষয়ে প্রোজেক্ট রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রশ্ন করলে উত্তর মিলবে।’
এদিকে, আলিপুরদুয়ার হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ গরমের ছুটির পর স্কুল খুললে অতিরিক্ত ক্লাস করার চিন্তা করছে। কোন শিক্ষক, কখন ক্লাস করাবেন, সে বিষয়ে পড়ুয়াদের জানিয়ে দেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্তনু দত্ত বলেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণিভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। তবে সেখানে পড়ুয়ারা কতটা অংশ নেবে, তা ভাবাচ্ছে। সেজন্য এক্সট্রা ক্লাসের ভাবনা। আলিপুরদুয়ার বালিকা শিক্ষামন্দির বিদ্যালয়ে অবশ্য অনলাইন ক্লাসের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হবে। সপ্তাহে দু’দিন প্রতিটি পড়ুয়া ও অভিভাবকদের কাছ থেকে পঠনপাঠনের পরিস্থিতি জেনে নেওয়া হবে।
নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, ‘এভাবে ছুটি দিলে শিশুদের পঠনপাঠন ব্যাহত হবে। সরকারের উচিত সমস্ত আবহাওয়ায় স্কুল পরিচালনার পরিকাঠামো তৈরি করে স্কুলকে শিশুবান্ধব করে তোলা। তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে মিড-ডে মিল সহ বিদ্যালয় পরিচালনা করলেই সমস্যা মিটে যেত।’