- সুমন্ত বাগচী
একইসঙ্গে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলে। জুনিয়ার, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলোতে এখন পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে পুরোদমে।
হাইস্কুলের চারপাশে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুশিক্ষাকেন্দ্র আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে এইসময়। না হলে জুনিয়ার, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের রক্তাল্পতা আরও বাড়বে। বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ আছে। আবার জুনিয়ার, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি শুরু হয় পঞ্চম শ্রেণি থেকে। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জুনিয়ার, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এইসব ক্ষেত্রেই পঞ্চম শ্রেণি আছে। একটা সময় ছিল যখন ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় বিদ্যালয় সংখ্যা কম ছিল। সেই সময় থেকেই এই ব্যবস্থার শুরু। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল।
গত পনেরো-কুড়ি বছরে পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সরকারি বা সরকারপোষিত স্কুলগুলো থেকে। বাধ্য না হলে খুব কম সংখ্যক অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েদের এইসব স্কুলে পাঠান। যাঁরা পাঠান, তাঁদের অধিকাংশের মনেও একটা আক্ষেপ থাকে।
এখন বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ছাত্র সংখ্যা একশোর নীচে। শহরাঞ্চলে একেবারেই হাতেগোনা দু-একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা ভালো। ছাত্রসংখ্যার দিক দিয়ে। লক্ষ করলেই বোঝা যায়, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা এখনও যথেষ্ট ভালো, তারা শহরের কোনও প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী স্কুলের ছাতার তলায়। অভিভাবকদের আশা থাকে ভবিষ্যতে ছাত্ররা এখান থেকে পাশ করে ওই ঐতিহ্যশালী মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যলয়ে সহজেই ভর্তি হতে পারবে। উদাহরণ জলপাইগুড়ি শহরের সোনাউল্লা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকা প্রাথমিক স্কুল। একইভাবে শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের চত্বরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদাহরণ দেওয়া যায়।
শহরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। অনেক সরকারি প্রাথমিক স্কুল ছাত্রের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির অবস্থা এত খারাপ নয়। অসাম্য অনেক কম। রাজগঞ্জ ব্লকের ফাটাপুকুর সংলগ্ন অঞ্চলে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিশুশিক্ষাকেন্দ্র আছে, তাদের অনেক স্কুলেই ক্লাস ফাইভে দশজন ছাত্র নেই। মাত্র দুটো সরকারপোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ফাইভে ছাত্রসংখ্যা কুড়ির ওপরে। কিন্তু একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে ক্লাস ফাইভের ছাত্রসংখ্যা গমগম করছে।
এইটাই মোটামুটি সারা জেলার এবং রাজ্যের চিত্র। উনিশ বিশ হতে পারে। তাহলে একই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জুনিয়ার, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি রাখার যৌক্তিকতা কী? দুই জায়গাতেই প্রচুর আসন ফাঁকা থাকছে। ফলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠনের জন্য যে ব্যবস্থা করতে হয়, তার একধরনের অপচয় ঘটছে। বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর বছর কয়েক আগে এক নির্দেশনামা দিয়ে জানিয়েছিল, চাইলে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুল পঞ্চম শ্রেণি তুলে দিতে পারে। কিন্তু এইভাবে পঞ্চম শ্রেণিকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি থেকে সরানো যাবে না। কারণ বহু বিদ্যালয়েই ছাত্রসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। পঞ্চম শ্রেণি উঠে গেলে আরও কমে যাবে। তাই চাই স্পষ্ট নির্দেশ।
অমর্ত্য সেন প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ভিক্ষের কারণ কম ফসল উৎপাদন নয়। কারণ সঠিক বণ্টনের অভাব। শিক্ষাক্ষেত্রেও একথা খাটে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
( লেখক শিলিগুড়ির বাসিন্দা। শিক্ষক )