নকশালবাড়ি: নেপাল সীমান্তে পরপর হাতির মৃত্যুতে আশঙ্কিত পরিবেশপ্রেমীরা। এই মরশুমে গত দু’মাসে চারটি হাতি মারা গিয়েছে। বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ বৈদ্যুতিক ফেন্সিং, চোরাশিকারির বন্দুকের গুলি। সোমবার বছরের প্রথম দিনেই নেপালের মোরাং জেলার মুনালঝোরা এলাকায় একটি পূর্ণবয়স্ক হাতিকে গুলি করে মারা হয়েছে। মারার পর হাতিটির লেজ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয়রা হাতিটিকে মৃত অবস্থায় দেখে বন বিভাগকে খবর দেন। এই এলাকাটি নেপালের সালাকপুর ডিভিশনের আওতায় পড়ে। হাতিটির ঘাড়ে এবং পায়ে যে গুলি করে মারা হয়েছে, তা স্পষ্ট করেছেন সেখানকার বন বিভাগের আধিকারিকরা। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর নেপালের ঝাপা জেলার জলথল এলাকায় একটি পূর্ণবয়স্ক হাতিকে বৈদ্যুতিক ফেন্সিংয়ে আটকে মারা হয়েছে।
শীতের শুরুতেই এই হাতিগুলি খাবারের লোভে পানিঘাটা কলাবাড়ি বনাঞ্চল থেকে মেচি নদী পেরিয়ে নেপালে ঢুকেছিল। আর এটাই হাতির দলের কাছে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছর আগেই ২০১৫-’১৬ সালে কলাবাড়ি বনাঞ্চল থেকে ভারত থেকে হাতির দল আটকাতে ভারত-নেপাল সীমান্তের কাঁকড়ভিটা থেকে লোহাগড়ের তিলিং পর্যন্ত ১৭.৫ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফেন্সিং করেছে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই বৈদ্যুতিক ফেন্সিং মেরামত না করায় সেটি অকেজো হয়ে পড়েছে। এরই সুযোগ নিয়ে কলাবাড়ি বনাঞ্চল থেকে হাতির দল নেপালে ঢুকছে।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলাবাড়ি বনাঞ্চল থেকে প্রায় ৫০টি হাতি নেপালে ঢুকেছে, যেগুলি ফেব্রুয়ারি নাগাদ পুনরায় ভারতের কলাবাড়ি বনাঞ্চলে ফিরবে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ থেকে পরপর এভাবে হাতির মৃত্যুর খবর আসায় চিন্তায় রয়েছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠন থেকে বনকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতির সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে চলেছে ঐরাবত সংস্থা। এই সংস্থার সভাপতি সিকে ছেত্রী বলেন, ‘গত তিন বছরে নেপালে ৯টি হাতিকে মারা হয়েছে। এই মরশুমেই চারটি হাতি মারা গিয়েছে। এভাবে চললে যে হাতিগুলি নেপালে রয়েছে তারাও ফিরবে কি না সন্দেহ। এই নিয়ে আমরা ভারত সরকারের চিঠি দিয়েছি। যাতে নেপাল সরকার দ্রুত হাতির মৃত্যু নিয়ে ব্যবস্থা নেয়।’ যদিও কার্সিয়াং বন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘শীতের মরশুমে হাতির দল নেপালে ঢুকলে ভারতীয় কৃষকরা অনেকটাই হাতির হানা থেকে রেহাই পায়। এটাই বাস্তব সত্য। তবে নেপালে যেভাবে হাতির মৃত্যু হচ্ছে সেটাতে আমরা আশঙ্কিত।’