রণজিৎ ঘোষ, সুকনা : ২৩ বছর পরে পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে। গ্রামগুলি যেন ২৩ বছর বা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে রয়েছে। এখনও গ্রামগুলিতে যাতায়াতের জন্য রাস্তা পর্যন্ত নেই। মাঠে চাষ করলে হাতিতে সব খেয়ে যাচ্ছে। পশুপালন করলে চিতাবাঘ এসে সেগুলিকে খেয়ে যাচ্ছে। ১০০ দিনের কাজ করেও বহুদিন ধরে টাকা মিলছে না। ফলে সুকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা বনবস্তিগুলি চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তবে, দীর্ঘ দু’দশক পরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ফিরছে, এই ভেবেই এখানকার বাসিন্দারা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন।
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) সুকনা-পানিঘাটা সমষ্টির সভাসদ পরেশ তিরকি বলেন, ‘ওই গ্রামগুলির সমস্যার কথা আমরাও জানি। এর আগে আমরা বনবস্তিগুলিতে যাতায়াতের রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বন দপ্তর কিছুতেই অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে এখনও রাস্তা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বাকি সমস্যাগুলি পঞ্চায়েত গঠনের পরেই মেটানো হবে।’
সুকনা বাজার থেকে যে রাস্তাটি হাসপাতাল, পুলিশের তদন্ত কেন্দ্রের দিকে নেমে গিয়েছে, সেই এবড়ো-খেবড়ো কাঁচা রাস্তায় একদিকে মহানন্দা অভয়ারণ্য, অন্যদিকে গুলমা চা বাগানের মাঝের জলকাদা পেরিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ভিতরে খইরানি বস্তি এবং পুন্ডিং বস্তি। কিছুটা সমতল, কিছুটা টিলার উপরে তৈরি এই দুটি বস্তিতে প্রায় ২৫০ ঘর বাসিন্দা রয়েছেন। প্রায় ৬০০ ভোটার রয়েছেন। এবার এই সংসদে বিজিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস, দুই দলই প্রার্থী দিয়েছে।
গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল, দু’দিকে উঁচু উঁচু কাঠের বাড়ি। সিংহভাগ বাড়িরই ভগ্নপ্রায় অবস্থা। অভাব-অভিযোগের বিষয় তুলতেই বাসিন্দারা ক্ষোভ উগরে দিলেন। খইরানির বাসিন্দা সাবিত্রী শর্মা, মণিকুমার শর্মা, পুন্ডিং বস্তির শ্যাম থাপা, নীরজ শর্মা সহ অন্যরা বলেছেন, আমরা না পাহাড়, না শিলিগুড়ির কোনও সাহায্য পাই। আগে বন দপ্তর থেকে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। দুটি গ্রাম মিলিয়ে একটিই পানীয় জলের ট্যাংক রয়েছে। সেটি আবার বাসিন্দারাই টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন। দিনে দু’বার করে ওই ট্যাংক থেকে জল দেওয়া হয়। খরচ হিসাবে প্রত্যেকটি পরিবারকে মাসে ১০০ টাকা করে দিতে হয়। কিন্তু পরিবারগুলির আয়ের পথ বলতে তেমন কিছুই নেই।’ তাঁদের দাবি, দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের আমলে চাষের জন্য আলু, ভুট্টার বীজ দেওয়া হত। বনের ভিতরে বিভিন্ন বৃক্ষরোপণের কাজও ছিল। এখন আর কিছুই নেই। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুকনা বনবাংলোতে থাকাকালীন এই বনবস্তিতে এসেছিলেন। উন্নয়নের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বাসিন্দাদের কথায়, ‘কী করে খাব বলুন? পিছনে অভয়ারণ্যের ফাঁকা জমি রয়েছে। সেখানে চাষ করতেই পারি। কিন্তু ভুট্টা হোক বা আলু, যা চাষ করেছি সব হাতিতে খেয়ে গিয়েছে। আবার বাড়িতে ছাগল, মুরগি পালন করলে চিতাবাঘ এসে হামলা করছে। আবার ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে অন্য সরকারি কাজ করেও হাজিরা পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে এখন লোকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে।’