নীলাংশু চক্রবর্তী, জামালদহ: প্রশাসনিক কিংবা দলের, বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত হওয়া সেই সমস্ত সভায় বহুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গিয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারি যে নার্সিংহোম মালিকদের কাছে ‘ঠুনকো’ তা আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। এরফলে সমস্যায় পড়েছে এক হতদরিদ্র পরিবার। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করতে না পারায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে তিন বছরের শিশু আলমগীর ইসলাম।
মেখলিগঞ্জ ব্লকের জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের মসজিদ পাড়া এলাকার ঘটনা। এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন দিনমজুর। অভাব অনটন নিত্য সঙ্গী পরিবারের। রফিকুল ইসলামের দুই সন্তান। বড় মেয়ে স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ওনার ছেলে আলমগীর ইসলামের বয়স মাত্র তিন বছর। বাড়িতে খেলতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যায় ছোট্ট আলমগীর। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জামালদহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বাড়ি নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পরেরদিন থেকে দেখা যায় আলমগীরের বাঁ হাত ও বাঁ পা অসাড় হয়ে গিয়েছে। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় পরিবারের লোকজন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়িতে। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শে সিটি স্ক্যান ও এমআরই করার পরে দেখা যায় আলমগীরের মস্তিষ্কে জল জমে রয়েছে। তাই সামান্য আঘাতে তার দুটি অঙ্গ কাজ করছে না। দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। দিনমজুর এই পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয় চালানো অসম্ভব। বাড়ি ফিরে এসে দেখা যায় আলমগীরের পরিবারে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই। তড়িঘড়ি সেই কার্ড তৈরি করা হয়। কার্ড হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহ খানেক আগে আলমগীরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়িতে। কিন্তু অভিযোগ, বিভিন্ন নার্সিংহোম থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমনকি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে।
আলমগীর ইসলামের মা নাজমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘শিলিগুড়ির এক নামকরা নার্সিংহোম মুখের উপর বলে দেয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে চিকিৎসা হবে না। অন্য আরেক বেসরকারি হাসপাতাল বলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে মাথার চিকিৎসা হয় না। তাই বাড়ি ফিরে এসেছি।‘ এবিষয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অম্বুজ কুমার ঠাকুর বলেন, ‘দ্রুত বাচ্চার চিকিৎসার দরকার। তাকে যেন পরিবারের লোকজন শিলিগুড়ি মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা করা হচ্ছে।‘