মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: ২০১৬-র প্যানেল (SSC) বাতিল হওয়ার পরের দিনের কথা। বীরপাড়ার সুভাষপল্লির বেদান্ত দত্তকে দেখে পাড়াতুতো কাকুর সহাস্য প্রশ্ন, ‘চাকরিটা আছে তো?’
ঠান্ডা মাথায় তাঁকে বেদান্ত বললেন, ‘কাকু আমি তো প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করি।’
শুধু পাড়াতুতো কাকুই নন! দু’একজন আত্মীয়ও নাকি ফোন করে জানতে চেয়েছেন, বেদান্তর চাকরিটা আছে না গিয়েছে। ঘটনা হল, প্রাইমারি নাকি হাইস্কুল, সাদা খাতাওয়ালা নাকি স্বচ্ছ পরীক্ষার্থী, কত সালের প্যানেল কোন প্রেক্ষিতে বাতিল তা নিয়ে স্বল্পশিক্ষিতরা তো বটেই, শিক্ষিতদেরও একটা অংশ অন্ধকারে। তবে সমাজের একেবারে নীচুতলাতেও খবর পৌঁছে গিয়েছে, মাস্টারদের চাকরি বাতিল। সমাজে নানা প্রতিক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে ন্যূনতম ধারণা নেই, এমন অনেকেরই বক্তব্য, ‘মাস্টারদের চাকরি গিয়েছে ভালোই হয়েছে।’ শিক্ষকরা এককথায় মানছেন, অনিয়মের অভিযোগে প্যানেল বাতিলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা মাটিতে।
এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social media) নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন ফালাকাটার কড়াইবাড়ির বাসিন্দা হাইস্কুল শিক্ষক সঞ্জীব কার্জি। সঞ্জীবের মহল্লাতেও উৎসুক পড়শিরা। প্রশ্ন একটাই! ‘সঞ্জীবের চাকরিটা আছে নাকি গিয়েছে?’ এনিয়ে আক্ষেপ করলেন মাদারিহাটের পশ্চিম খয়েরবাড়ির দধিরাম রায়ও। তাঁর কথায়, ‘আমি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। অথচ আমাকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।’
প্যানেল বাতিলের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়তা বেড়েছে মিমারদের। পশ্চিমবঙ্গে স্যোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে এই মুহূর্তে শিক্ষক-শিক্ষিকাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় মিম মেটিরিয়াল (Meme material)। মিম বানাতে গিয়ে টেনে আনা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যক্তিগত জীবনকেও। চাকরির পর বিয়ে করেছেন অনেক শিক্ষকই। চাকরি গেলে বৌ থাকবে কি না, শ্বশুরমশাইকে যৌতুক ফিরিয়ে দিতে হবে কি না, তা নিয়েও মিম তৈরি করা হচ্ছে। রাঙ্গালিবাজনার প্রণতোষ সূত্রধর ২০১২ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩ সাল থেকে কোচবিহারের একটি হাইস্কুলে যোগ দেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা হীনম্মন্যতায় ভুগছি। শিক্ষিত লোকজনের প্রতিক্রিয়ায় অবাক হতে হচ্ছে।’ তবে সবারই এক কথা, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন।