সুভাষ বর্মন, ফালাকাটা: দুর্ঘটনায় রাস্তায় ছিটকে পড়েছিলেন ফালাকাটার (Falakata) কালীপুরের পোস্ট মাস্টার সুব্রত সরকার। স্থানীয়রা দেখেও এগিয়ে আসেননি। সেসময় ওই রাস্তা দিয়ে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন আজিমুল মিয়াঁ, আসাদুল হকরা। তাঁরাই তড়িঘড়ি উদ্ধার করে আহতকে কোচবিহারের (Cooch Behar) এক নার্সিংহোমে পৌঁছে দেন। এটা এক বছর আগে ফালাকাটা-কোচবিহার সড়কের চৈতন্যহাটের ঘটনা। জীবন ফিরে পান সুব্রত। শুক্রবার সিমলাবাড়ি গ্রামে আজিমুলের বাড়িতে গিয়ে হাজির সুব্রত। গিয়েছিলেন আসাদুলের বাড়িতেও। সঙ্গে পরিবারের সবার জন্য নিয়ে যান নতুন জামাকাপড়, মিষ্টি, লাড্ডু। খেয়ে আসেন সেমাই। এমন মানবিকতায় যেন দূর হয় ধর্মীয় ভেদাভেদ। সেদিনের মানবিকতার এমন প্রতিদান পেয়ে খুশি ট্রাকচালক আজিমুলরাও।
এদিন সকালে সুব্রত সহকর্মী বাবুল সরকারকে নিয়ে পৌঁছে যান আজিমুলদের বাড়িতে। এক বছর আগের সেই দুর্ঘটনায় দ্বিতীয়বার জীবন ফিরে পাওয়া এবং আজিমুলদের সেই সহযোগিতার কথা স্মরণ করে সুব্রত বলেন, ‘সেদিন অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও আজিমুলরা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে যেন আমি দ্বিতীয়বার জীবন ফিরে পেয়েছি। কারণ নার্সিংহোমে শুধু ভর্তি করে দেওয়াই নয়, তারপরেও বারবার ফোন করে আমার খোঁজ নিয়েছেন তাঁরা। মনে হয়েছিল, আপনজনের থেকেও বেশি আপন। সেসব কথা জীবনে ভুলতে পারব না।’ তাঁর কথায়, ‘তাঁদের সঙ্গে তাই আমিও যোগাযোগ রেখেছি। বৃহস্পতিবার ইদের জন্য সবাই ব্যস্ত ছিলেন। তাই এদিন ওঁদের বাড়িতে এসে দেখা করলাম। আর আমার তরফ থেকে সামান্য কিছু উপহার দিলাম।’
এদিকে এভাবে যে সুব্রত কৃতজ্ঞতা জানাতে বাড়িতে চলে আসবেন, সেটা ভাবতেই পারেননি আলিপুরদুয়ার-১ (Alipurduar) ব্লকের সিমলাবাড়ি গ্রামের আজিমুল মিয়াঁ ও আসাদুল হকরা। দুজনই ট্রাকের চালক। আজিমুল বললেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সেদিন যেটা করণীয় ছিল, করেছি। এজন্য ইদের পরদিন যে এভাবে উনি আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন, ভাবতে পারিনি। পরিবারের সবার জন্য নতুন বস্ত্র দিয়েছেন। আমরাও যথাসাধ্য আপ্যায়ন করেছি।’
এখন ধর্ম নিয়ে যেভাবে রাজনীতি করা হচ্ছে, সেখানে এই মানবিকতার সম্পর্ক যেন ধর্মকেও হার মানায়। আরেক ট্রাকচালক আসাদুল হক জানান, ধর্ম ধর্মের জায়গায়। আর সম্পর্কের সঙ্গে তো ধর্মের যোগসূত্র নেই। হৃদয়ের এই সম্পর্ক অটুট থাকবে। প্রতিবার ইদেই এখন আজিমুলদের বাড়িতে যাবেন বলে সুব্রত সরকার জানিয়েছেন।