ফালাকাটা ও সোনাপুর: প্রখর রোদ দেখে বুধবার সকালেই ঝিঙেখেতে হাজির বংশীধরপুরের চাষি উত্তমকুমার দাস। দেখলেন, মাটি শুকিয়ে গিয়েছে। দু’দিন আগেই জল দিয়েছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। চরতোর্ষা নদীর চর এলাকায় ঝিঙেখেত। তখন তড়িঘড়ি ছেলে রতনকে নিয়ে পাম্পসেট চালিয়ে সেচ দেওয়া শুরু করলেন উত্তম।
উত্তম বলছিলেন, ‘নিয়মিত সেচ না দিলে ঝিঙে গাছ শুকিয়ে মরে যেতে পারে। তাই খরচ বেশি লাগলেও এখন রোজ জল দিতেই হবে।’ শুধু ওই চাষি একাই নন। ফালাকাটার ভুট্টাচাষিদেরও সেচ দিতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে। কেউ শসাখেত প্রস্তুত করে রেখেছেন। জলের অভাবে শসার বীজ রোপণ করতে পারছেন না। আবার বোরোচাষিদেরও নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে।
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের ছবিটাও একই। এমন তাপপ্রবাহে সেচই যে বড় সমস্যা তা কৃষি দপ্তরও মেনে নিয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নিখিল মণ্ডলের কথায়, ‘এখনও পর্যন্ত চাষাবাদের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যার খবর নেই। সবকিছু ঠিকই রয়েছে। তবে বৃষ্টি না হলে আর এমন তাপপ্রবাহ চললে সেচের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হবে।’
ফালাকাটা ব্লকের ফালাকাটা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত, ময়রাডাঙ্গা, শালকুমার, দেওগাঁও, ধনীরামপুর, জটেশ্বর, গুয়াবরনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পুরোপুরি কৃষি অধ্যুষিত। এখন আলুর পরে ফালাকাটার দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল হল ভুট্টা। এছাড়া বোরো ধানেরও চাষ হয়। কালীপুর, বংশীধরপুর, আসাম মোড়, শিশাগোড় সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। এক্ষেত্রে সেচ লাগবেই। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সেচের পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। তাই প্রতি ঘণ্টায় আড়াইশো-তিনশো টাকা দরে সেচের জল কিনে নিতে হচ্ছে চাষিদের৷
শিশাগোড়ের ভুট্টাচাষি কৃষ্ণপ্রসাদ বর্মনের কথায়, ‘গতবছরও এই সময় মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হত। কিন্তু এবার সেরকম বৃষ্টি হচ্ছে না। আর এদিন তো প্রখর রোদ। তাই তিন ঘণ্টা ভুট্টাখেতে সেচ দিয়েছি।’ আসাম মোড়ের ঝিঙেচাষি নিমাই দাস বলছিলেন, ‘অন্য দিন দু’ঘণ্টা সেচ দিলেই হত। কিন্তু এদিন প্রায় চার ঘণ্টা ঝিঙেখেতে জল দিতে হল।’
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের শালকুমারহাট, পূর্ব কাঁঠালবাড়ি, পাতলাখাওয়া, চকোয়াখেতি, পররপার, তপসিখাতা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কৃষকদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ। তাপপ্রবাহের জেরে ভুট্টার পাশাপাশি এই ব্লকের বোরো ও পাটচাষিরা উদ্বিগ্ন। এখন খেতে জলের প্রয়োজন। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তাই সেচের উপর ভরসা করতে হচ্ছে চাষিদের।
পররপারের কৃষক ননী দাসের কথায়, ‘আমাদের এলাকায় সরকারি সেচের ব্যবস্থা নেই। টাকা দিয়ে ঘণ্টা হিসেবে জমিতে জল দিতে হয় পাম্পসেট লাগিয়ে।’ কথা হচ্ছিল পূর্ব কাঁঠালবাড়ির গৌরাঙ্গ সরকারের সঙ্গে। তাঁর আক্ষেপ, ‘এমনিতেই তো চাষের খরচ বেড়েছে। এখন সেচের জন্য আরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সব জায়গায় সরকারি সেচ ব্যবস্থা তো নেই।’