কোচবিহার: সদ্য আলোর উৎসব শেষ হয়েছে। এখনও রেশ কাটেনি। হরেকরকমের আলোয় অন্ধকার কাটিয়ে নতুন আলোর দিশা খুঁজেছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু আলোই কি সব? অন্ধকার কোথায়? প্রকৃতির দেওয়া অন্ধকার কাটিয়ে নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে যেভাবে আলো দূষণ ঘটানো হচ্ছে তাতে একের পর এক বিপন্ন হচ্ছে পাখি, পোকামাকড়। একসময় প্রচুর শ্যামাপোকা বা জোনাকি দেখা গেলেও এখন সেভাবে নজরে পড়ে না। চড়া আলোর প্রভাবে শহরাঞ্চল থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আগের মতো তারা বা উল্কাও দেখা যায় না। আলো-অন্ধকারের এই দিকগুলি তুলে ধরে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। ‘লেট দেয়ার বি ডার্কনেস’ নামের সেই তথ্যচিত্রটি এবার পারি দিচ্ছে পর্তুগালে। সেখানে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হবে পুলিশ আধিকারিকের তৈরি করা এই তথ্যচিত্র।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (হেড কোয়ার্টার) পদে ছিলেন দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। চলতি বছরের মার্চে তথ্যচিত্রটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়। প্রায় ছয় মাস লেগেছিল সেটি তৈরি করতে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বায়ু দূষণ, জল দূষণ, গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে বহু চর্চা হতে দেখা যায়। কিন্তু আলো দূষণের মতো বিষয় নিয়ে ভাবার সংখ্যা অনেক কম। যতদিন যাচ্ছে ততই অত্যাধুনিক আলো তৈরি হচ্ছে। রাতের বেলা আলোর দাপটে পাখিরা বিপন্ন হচ্ছে। আলো দিয়ে গাছ সাজানোয় সেই গাছে থাকা পাখি, পোকামাকড়ের সংখ্যা কমছে। মানুষের শারীরবৃত্তিয় নানা সমস্যাও হচ্ছে। আলো দূষণের পরিমাণ এতই বাড়ছে যে শহরাঞ্চল থেকে আকাশের দিকে তাকালে তারা, উল্কাপিন্ড বা ছায়াপথ ভালোভাবে দেখা যায় না। কিন্তু একটা সময় এগুলি ভালোভাবে দেখা যেত। যে পরিযায়ী পাখির দলগুলি রাতের বেলায় তারা দেখে পথ চিহ্নিত করে এগিয়ে যেত তারাও কৃত্রিম আলো দেখে পথভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘আলোর দূষণের জেরে আমরা প্রকৃতির অন্ধকারকে হারাতে বসেছি। পাখি, পোকামাকড় সহ মানুষেরও শারীরবৃত্তিয় সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়গুলিই ১৮ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা রয়েছে।’
ইংরেজি ধারাভাষ্যে নির্মিত তথ্যচিত্রটিতে বহু মানুষের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই এই তথ্যচিত্র দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ইতালিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সেরা তথ্যচিত্র ও সেরা সাউন্ডট্র্যাকে জোড়া পুরষ্কারের খেতাব মিলেছে। কলকাতায় আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ঝাড়খণ্ড আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সহ নানা জায়গায় এটি প্রদর্শিত হওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছে। এবার পর্তুগালে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাচ্ছে তথ্যচিত্রটি।