দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার : ভেজাল বীজে চাষ করার পরিণতি কী হয় তা ভুক্তভোগী কৃষকমাত্রই জানেন। এর জেরে একদিকে যেমন আশানুরূপ ফসল উত্পাদন হয় না, অন্যদিকে, আর্থিক প্রচুর ক্ষয়ক্ষতিও হয়। তবে আর নয়। উত্তরবঙ্গের কৃষকদের জন্য সুখবর। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ইউবিকেভি)-এ এবারে সিড ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ল্যাবরেটরি তৈরি হচ্ছে। এই বিশেষ ধরনের পরীক্ষাগারে বীজের জিনগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা সম্ভবপর। পাশাপাশি, খুব সহজেই নকল বীজকে চিহ্নিত করা যাবে। এর ফলে কৃষকদের পাশাপাশি অর্থনীতিরও ভালো হবে।
ইউবিকেভি সূত্রে খবর, এই ধরনের পরীক্ষাগার উত্তরবঙ্গে এই প্রথম, রাজ্যে দ্বিতীয়। কলকাতার টালিগঞ্জে এধরনের একটি পরীক্ষাগার আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অধিকর্তার তত্ত্বাবধানে সোমবার থেকে ইউবিকেভি’র পরীক্ষাগারটিতে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের গোড়া থেকে পরীক্ষাগারটি পুরোপুরিভাবে চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। গোটা কাজটির জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। মূলত কৃষক, বীজ ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সিড ডিস্ট্রিবিউটাররা এই পরীক্ষাগার থেকে বীজ পরীক্ষার সুযোগ পাবেন। সরকারি কৃষিজ সংস্থা, কৃষি দপ্তর বিনামূল্যে এই পরীক্ষাগার থেকে বীজ পরীক্ষার সুযোগ পাবে। সাধারণ কৃষকদের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলি থেকে বীজের মান পরীক্ষার জন্য সামান্য টাকা নেওয়া হবে।
গোটা বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ইউবিকেভি’র সঙ্গে যুক্ত সবাই খুবই উচ্ছ্বসিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য ডঃ দেবব্রত বসু বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে এই প্রথম এধরনের কোনও পরীক্ষাগার তৈরি হচ্ছে। রাজ্য সরকার আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় আমরা গর্বিত।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অধিকর্তা ডঃ অশোক চৌধুরী বললেন, ‘এতদিন বীজের ডিএনএ পরীক্ষা করতে হলে কৃষক, বীজ ব্যবসায়ী ও কৃষি আধিকারিকদের বীজ সেই টালিগঞ্জে পাঠাতে হত। রাজ্যের কৃষি দপ্তরের সহযোগিতায় কোচবিহারে আমাদের এখানে এখন থেকে এই পরীক্ষা সম্ভব হবে।’ ইউবিকেভি সূত্রে খবর, টালিগঞ্জে যে পরীক্ষাগারটি রয়েছে সেই তুলনায় এখানকার পরীক্ষাগারটিকে অনেকটাই উন্নতমানের হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য উন্নতমানের বহু আধুনিক যন্ত্রপাতি এখানে আনা হয়েছে।
সিড ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ল্যাবরেটরি আসলে কী? ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং পদ্ধতিতে একজন মানুষের ডিএনএ’র (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) সঙ্গে যেমন আরেকজন মানুষের ডিএনএ’র মিল ও অমিল বের করা যায়, সেভাবেই সিড ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং পদ্ধতিতে কোনও বীজের সঠিক জাত নির্ণয়, বীজে কোনও ভেজাল রয়েছে কি না তা বের করা সম্ভব। যখন বীজ বিতরণ করা হবে তার আগেই এই পরীক্ষা হবে।
বীজের ভিতরের কোষ থেকে ডিএনএ বের করে বীজের মান পরীক্ষা করা হবে। বীজের ডিএনএ আলাদা করে তার জিনগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হবে। যে কোনও মানের বীজ ইউবিকেভি’র এই পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা সম্ভব।
পরীক্ষার জন্য বীজ কলকাতায় পাঠাতে হলে একদিকে যেমন সময় লাগে অন্যদিকে, অনেকটা খরচও হয়। এবার থেকে ইউবিকেভিতে খুব কম খরচে বীজের মান পরীক্ষা সম্ভব হওয়ায় উত্তরবঙ্গ অনেকটাই উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ধরনের পরীক্ষাগার চালাতে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হয়। আশার বিষয় বলতে, ইউবিকেভি’র কাছে এ ধরনের অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডঃ অভিজিত্ কুণ্ডু ও ডঃ রূপসনাতন মণ্ডল ইউবিকেভি’র পরীক্ষাগারটির দায়িত্ব সামলাবেন।