বালুরঘাট: শহরের মাঝখানে বনাঞ্চল, যা বালুরঘাটবাসীর কাছে শালবাগান হিসেবে পরিচিত। রাত হলেই ওই শালবাগান থেকে শিয়ালের দল বেরিয়ে পড়ছে শহরের রাস্তায়। শিয়ালের উপদ্রবে নাজেহাল অবস্থা বালুরঘাট পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর। বাসিন্দাদের সঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলার একত্রিতভাবে বন দপ্তরের কাছে এই বনাঞ্চল রক্ষণাবেক্ষণ ও শিয়ালের উপদ্রবের কথা জানিয়ে চিঠি করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, দপ্তর কোনও পদক্ষেপ করেনি।
গ্রামেগঞ্জে শিয়ালের বাড়বাড়ন্তের কথা শোনা যায়। এমনকি কিছুদিন আগেও বালুরঘাট ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় শিয়ালের উপদ্রবের কথা উঠে এসেছিল। কিন্তু এবার গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও শিয়ালের উপদ্রবে রাতের ঘুম কেড়েছে শহরবাসীর। শহরের বুকে সাহেব কাছাড়ি পার করে শালবাগান এলাকায় রাত হলেই রাস্তায় দেখা মিলছে শিয়ালের। এই বনাঞ্চল রায়গঞ্জ বন বিভাগের অধীনে রয়েছে। মাঝেমধ্যেই অন্ধকার বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে পড়ছে শিয়ালের দল। এমনকি মাঝরাতে পথকুকুররা শিয়ালদের দেখে তারস্বরে চিৎকার শুরু করছে। ফলে আতঙ্ক গ্রাস করছে বাসিন্দাদের।
ওই এলাকার অদূরে রয়েছে বিবেকানন্দ পাড়া। যেখানে অধিকাংশ বাড়িতে গবাদিপশু পালন করেন। শালবাগান পেরিয়ে শিয়ালের দল সেই এলাকায় হানা দিলে গবাদিপশুদের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। কিন্তু এই বনাঞ্চলের প্রকাণ্ড গাছগুলির ঝোপঝাড় কেটে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মত কাউন্সিলারের। প্রায় ৮ মাস আগে বন দপ্তরকে তিনি লিখিতভাবে ওই বনাঞ্চল সংস্কার করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তারপরেও কোনও হেলদোল নেই দপ্তরের। যার ফলে এই শিয়ালের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক সঞ্জয় রাহা জানান, কয়েক বছর ধরেই এলাকায় শিয়ালের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এক বছর আগেও রাতে দরজা খুললে কিছুটা দূরেই শিয়ালের চোখ জ্বলজ্বল করতে দেখতাম। এখন রাত দশটার পরে রাস্তার ওপরে শিয়ালের উপদ্রব শুরু হয়েছে। যেকোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়িক মাধব মৈত্রের দাবি, ‘শিয়ালের অত্যাচারে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। বন দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত।’
ওয়ার্ড কাউন্সিলার প্রবীর দত্তের আক্ষেপ, ‘এলাকাবাসীদের সঙ্গে আমি বন দপ্তরকে লিখিতভাবে এই বনাঞ্চল রক্ষণাবেক্ষণ সহ শিয়ালের কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি। বলা হয়েছিল রায়গঞ্জ ডিভিশনে জানানো হবে। এখন আমি জেলাশাসক মারফত বনমন্ত্রী সহ মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর কথা ভাবছি।’
বালুরঘাট ফরেস্ট রেঞ্জার সুকান্ত ওঝা বলেন, ‘ডিএফও ম্যাডাম এসে সমস্তটা দেখে গিয়েছেন। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা ওই বনাঞ্চলে সাফাই অভিযানে নেমেছিলাম। কিন্তু বনাঞ্চলে শিয়ালের বাস। তারাই বা যাবে কোথায়? উপর থেকে অর্থ বরাদ্দ হলেই এসব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’