মানিকচকঃ নার্সিং কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে মানিকচকের (Manikchak) এক ছাত্রীর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিল এক প্রতারণা চক্র। চক্রটির ফাঁদে পা দিয়ে বাবা-মাকে না জানিয়েই প্রায় দুই লক্ষ টাকা দেয় ছাত্রীটি। এমনকি ছাত্রীটির কন্যাশ্রীর ৩০ হাজার টাকাও হাপিস করেছে প্রতারিত চক্রটি। ছাত্রীটিকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে চক্রটি বলে অভিযোগ। টাকা না দিলে তাকে ও তার পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে বলেও হুমকি দেয় চক্রের এক পান্ডা। বর্তমানে মানসিক অবসাদে ভুগছে সেই কলেজ ছাত্রী। এই ঘটনায় ছাত্রীর পরিবারের তরফে মালদা সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
মানিকচকের লালবাথানি এলাকার বাসিন্দা পেশায় চাষি বিপিন সরকার। তারই বড় মেয়ের সঙ্গে ঘটেছে এই প্রতারণার ঘটনা। ছাত্রী মানিকচক কলেজের প্রথম বর্ষে পাঠরতা। সে গত বছর জিএনএম ও এএনএম কোর্সে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিলেও উত্তীর্ণ হতে পারে নি। সেই সময় তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে জানতে পারেন, গোপাল ঘোষ নামে একজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাকে নার্সিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ করে দিতে পারবেন। বান্ধবীর প্রস্তাবে সায় না দিলেও পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গে শিক্ষক পরিচয় দিয়ে ফোনে যোগাযোগ করেন গোপাল ঘোষ নামে এক ব্যাক্তি। সেই সঙ্গে নার্সিং এ ভর্তির জন্য রেজিস্ট্রেশন করাতে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে সেই ব্যক্তি। প্রথমে ছাত্রী টাকা দিতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে নার্সিংয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার লোভে চক্রের ফাঁদে পা দেন। তারপর থেকে শুরু হয় আরও প্রতারণা। কখনও অনলাইন ক্লাসের নামে আবার কখনও নোটস দেওয়ার নামে টাকা আদায় করতে থাকে চক্রটি। এমনকি কন্যাশ্রীর ৩০ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এই করে চক্রটি ফাঁদে ফেলে প্রায় ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় ছাত্রীর কাছ থেকে।
এরপরই ছাত্রীটি বুঝে যায়, সে প্রতারিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সে জানায়, কন্যাশ্রীর ৩০ হাজার টাকা এবং বাবার দেওয়া প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আমি গোপনে পরিবারকে না জানিয়ে শুধুমাত্র নার্সিংয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য গোপাল ঘোষ নামে এক ব্যক্তিকে দিয়েছি। নার্সিংয়ে ভর্তি হতে না পেরে পরবর্তীতে তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে আমাকে আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিত সেই ব্যক্তিটি। আমাকে ও আমার পরিবারকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে বলে আমাকে হুমকি দেয়। আমি ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। গত কয়েকদিন আগে আমি আমার মা বাবাকে সমস্ত ঘটনাটি জানায়।
মা সরস্বতী সরকার বলেন, “আমরা এবিষয়ে কিছুই জানতাম না। জমির ফসল বিক্রি করা সমস্ত টাকা মেয়ের কাছেই থাকতো। কিছুদিন আগে তার কাছে টাকা চাইলে জানায় তার কাছে টাকা নেই। তারপরই বাড়ির বৌমার কাছে বিষয়টি জানতে পারি। কিন্তু মেয়ে এই ধরনের চক্রে জড়াবে তা কোনওদিন ভাবিনি। প্রায় এক লক্ষ ৮২ হাজার টাকা প্রতারণা হয়েছে মেয়ের সঙ্গে। এমনকি এখনও আরও টাকা চাইছে সেই প্রতারক। মেয়ে সেই ভয়ে বর্তমানে মানসিক অবসাদে ভুগছে। অবসাদের জেরে আমার মেয়ে কিছু না করে বসে সেই ভয় পাচ্ছি।”
এই বিষয়ে মালদা সাইবার ক্রাইম থানার আইসি জানান, ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ এবং এই কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত চক্রের হদিশ ও পাওয়া গেছে। ছাত্রীটি তার স্থানীয় মানিকচক থানায় এফআইআর দায়ের করলে আমরা আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করে এই চক্রের পর্দা ফাঁস করব।