রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : জমি সরকারি। কিন্তু তা কার এলাকায় তা নিয়ে চূড়ান্ত টানাপোড়েন। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ বা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর কেউই সমস্যার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে রাজি নয়। এই দ্বন্দ্বের মাঝেই একরের পর একর জমি প্লট করে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। মিলন মোড় থেকে শুরু করে গুলমা রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় এই ঘটনা ঘটছে। এই এলাকাটি আবার বন দপ্তরের কার্সিয়াং বিভাগের মধ্যে পড়ে।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জনক সাহার দাবি, ‘এলাকাটি জিটিএ এলাকার মধ্যে পড়ছে। বাসিন্দারা মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি জিটিএ নির্বাচনেও তাঁরা ভোট দিয়েছেন। সেখানে বনাঞ্চলের প্রচুর জমি প্লট করে বিক্রি হচ্ছে, এটা ঠিক। তবে, সেখানে কোনও সিন্ডিকেট যুক্ত রয়েছে বলে মনে হয় না। স্থানীয় দু’-তিনজন এভাবে জমি দখল করে বিক্রি করছেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’ অন্যদিকে, জিটিএ’র জনসংযোগ আধিকারিক এসপি শর্মার বক্তব্য, ‘ওই এলাকায় প্রচুর জমি দখল করে বিক্রি হচ্ছে এটা আমরা শুনেছি। আসলে এলাকাটা জিটিএ-তে পড়ছে, নাকি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সর্বশেষ মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে ওই এলাকার মানুষ চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোট দিয়েছিলেন। আমরা দ্রুত এই সমস্যা মিটিয়ে জমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিচ্ছি।’ অভিযোগ, পঞ্চায়েত ও জিটিএ’র মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে ঠেলাঠেলি চলছে। কোনও কাজের কাজ না হওয়ার ফাঁকে দিনকে দিন সরকারি জমি দখলদারি বাড়ছে। বহু চেষ্টা করেও কার্সিয়াংয়ের বিভাগীয় বনাধিকারিক হরিকৃষ্ণনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
গুলমাতে চা বাগানের লিজে থাকা সরকারি জমিতে তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা চেয়ারম্যানের বেআইনিভাবে রিসর্ট তৈরির ঘটনা নিয়ে প্রচুর হইচই হয়েছে। শাসকদলের জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতার নাম ওই রিসর্টের সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রশাসনও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে, এমনই অভিযোগ। অর্ধসমাপ্ত ওই রিসর্ট বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এবার মিলন মোড় থেকে গুলমা রেলস্টেশনে যাওয়ার রাস্তার দু’পাশে থাকা বন দপ্তরের জমি দখল করে বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওই জায়গায় প্রচুর বাড়ি, দোকান, রিসর্ট, হোটেল তৈরি হয়ে গিয়েছে। স্টেশনের কাছাকাছি কিছু জমি এখনও ফাঁকা রয়েছে। সেই জমিগুলিও দখল করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, গত ১৫ দিনে অন্তত পাঁচ একর জমি নতুন করে প্লটিং হয়েছে।
সেখানে দু’-একটি করে ঘর উঠতে শুরু করেছে। তবে, যে বাসিন্দারা জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন তাঁদের কাছেও জমির কোনও নথিপত্র নেই। কেউ পাঁচ বছর, কেউ তিন বছর আগে এই অঞ্চলে এসে কাঠা প্রতি ৭০-৮০ হাজার টাকা করে দিয়ে জমি কিনেছেন। এখন এই জমিই দুই-আড়াই লক্ষ টাকা কাঠা হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। তবে কারা এই বেআইনি কারবার করছে, তা নিয়ে বাসিন্দারা মুখ খুলতে চাননি। এই জমি বিক্রির সিন্ডিকেট কারা চালাচ্ছে? চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা জনক সাহার দাবি, ‘এখানে কোনও রাজনৈতিক দলের সিন্ডিকেট নেই। স্থানীয় কেউ এভাবে জমিগুলি নিজের দখলে নিয়ে প্লটিং করে বিক্রি করছে।’