আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার থেকে রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন আদিবাসী নেতা প্রকাশ চিকবড়াইক। মূলত আদিবাসী ভোটের অঙ্কেই প্রকাশকে এবার রাজ্যসভায় পাঠাতে চাইছে তৃণমূল। বর্তমানে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি পদে আছেন চা বাগানের কর্মী প্রকাশ চিকবড়াইক। বয়সে তরুণ এই আদিবাসী নেতা দ্রুত দলের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শীর্ষনেতাদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন। তবে তাতেই প্রকাশের রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়নি।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে প্রকাশ চিকবড়াইককে রাজ্যসভার প্রার্থী করার পেছনে রয়েছে আদিবাসী অঙ্ক। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই স্পষ্ট হয়েছে আলিপুরদুয়ারে চা বলয়ে নিজেদের প্রভাব বাড়িয়েছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও তা স্পষ্ট হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসী চা শ্রমিকরা কি রায় দেয় তা স্পষ্ট না হলেও তৃণমূল মনে করছে অবিলম্বে দলের প্রতি আদিবাসীদের আস্থা ফেরানো জরুরি। যেখানে আলিপুরদুয়ার থেকে বিজেপির সাংসদ রয়েছে সেখানে প্রকাশকে রাজ্যসভায় পাঠালে তিনি বিজেপির মোকাবিলা আরও শক্ত হাতে করতে পারবেন। এছাড়াও উত্তরবঙ্গ থেকে এতদিন তৃণমূলের একমাত্র সাংসদ ছিলেন পাহাড়ের নেত্রী শান্তা ছেত্রী। এবার শান্তাকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে আরও একজনকে সাংসদ করা দলের প্রয়োজন ছিল। সেক্ষেত্রে প্রকাশ চিকবড়াইককে বেছে নিয়েছে দল।
নিউল্যান্ডস চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলে প্রকাশ ১৯৯৯ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়। ২০০৪ সালে শিলিগুড়ি সূর্যসেন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে নিউল্যান্ডস চা বাগানে করণিক হিসেবে কাজে যোগ দেন। এখনও তিনি চা বাগানের একজন কর্মী হিসেবেই রয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়ে এন কে এস গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার জেলায় তৃণমূলের ভরাডুবি হয়। বিধানসভা ভোটের পর ওই বছরই দলের জেলা সভাপতি হিসেবে প্রকাশ চিকবড়াইককে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর আলিপুরদুয়ার জেলার দু’টি পুরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুটি পুরসভা নির্বাচনে শাসক দল সাফল্যের মুখ দেখতে পায়। সেই বিষয়টিও প্রকাশের পক্ষে গিয়েছে। প্রকাশ চিকবড়াইক বলেন, ‘দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। আগামী দিনেও দলের একজন অনুগত সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাব।’ দলের জেলা চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামী জানিয়েছেন, এই প্রথম আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ প্রার্থী হিসেবে একজনের নাম উঠে এল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী সমাজের মানুষের প্রতি এবং তাঁদের উন্নয়নের দিকে যে বিশেষ নজর রাখেন প্রকাশকে প্রার্থী করা সেটাই প্রমাণ করল।