মালদা: আট বছর আগে অবসর নিয়েছেন। তবে স্কুলের প্রতি, বাচ্চাদের প্রতি সেই ভালোবাসা এক বিন্দু কমেনি। নিঃস্বার্থভাবে এখনও প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের পাঠ দান করছেন ৬৮ বছরের শিক্ষিকা। যতদিন শরীর চলবে ততদিনই বিনা পারিশ্রমিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর এই উৎসাহকে স্বাগত জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি ইংরেজবাজারের যদুপুর কমলাবাড়ি হাইস্কুলের। ১৯৮৯ সালে কমলাবাড়ি হাইস্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন মালদা শহরের ২ নম্বর গভঃ কলোনি এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না ঘোষ রায়। সেই সময় থেকে স্কুল ও বাচ্চাদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা তৈরি হয় তাঁর। ২০১৫ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন স্বপ্নাদেবী। কিন্তু বয়সের সংখ্যাটা তাঁর মনোবলে প্রভাব ফেলতে পারেনি। অবসর নেওয়ার সময়ই তিনি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে বিনামূল্যে স্কুলে পড়ানোর আবেদন জানান। তাঁর এই আবেদন মেনে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষও। সেই ঘটনার পর ৮ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন স্কুলে ছুটে যান ৬৮ বছরের ‘যুবতি’। সন্তানহীন স্বপ্নাদেবীর কাছে এখন প্রায় নয় শতাধিক সন্তান বড়ো হয়ে উঠছে। স্বপ্নাদেবী বলেন, “২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি অবসর নিয়েছিলাম। অবসর নেওয়ার ঠিক আগে আমি ম্যানেজিং কমিটির কাছে বিনামূল্যে বাচ্চাদের পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করি। সেই রেজুলেশন পাশ হয়। সেই সময় থেকে এখনও আমি বাচ্চাদের পড়াচ্ছি। স্কুল থেকে আমাকে যাতায়াতের ভাড়া, টিফিনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তা নিতে পারিনি। স্কুলের সমস্ত বাচ্চা যেন আমার সন্তান। তাদের পড়াতে ভালো লাগে। টাকাটা আমার ভালো লাগার কাছে কিছু না। যা পেনশন মেলে তাতে চলে যায়। আমার এই কাজে আমার স্বামী আমাকে সম্পূর্ণ সাহায্য করেন। যতদিন আমার শরীর সুস্থ থাকবে ততদিন আমি এভাবেই স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাই।”
স্বপ্নাদেবীর এই প্রয়াসকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মতিউর রহমান। তিনি বলেন, “শিক্ষক সমাজের কাছে স্বপ্নাদেবী অনুপ্রেরণা। অবসর নেওয়ার পর ৮ বছরের বেশি সময় হলেও উনি এখনও রোজ স্কুলে আসেন। বাচ্চাদের ক্লাস নেন, পরীক্ষা নেন, খাতা দেখেন এক কথায় সবই করেন। স্কুলকে কিংবা বাচ্চাদের নিজের মতো না ভালোবাসলে এতটা করা যায় না। উনি নিজে মালদা শহর থেকে টাকা খরচ করে স্কুলে আসেন। উনি অঙ্ক ও ভৌতবিজ্ঞান ক্লাস নেন। তবে স্কুলের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর কাছে উনি অভিভাবকের মতো।”