অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। এই আপ্তবাক্যটির সারমর্ম সত্যি করে দেখাচ্ছেন এই নারী। সে এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনে স্বর্ণপদক হোক কিংবা বর্তমানে ভাওয়াইয়া গানের সুর দুয়েতেই সমান পারদর্শিতা দেখাচ্ছেন জলপাইগুড়ির পাতকাটার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা স্বপ্না বর্মন (Swapna Barman)। তিনি আজও অনেকেরই অনুপ্রেরণা। শহর জলপাইগুড়ি থেকে দূরে থেকেও যে স্বপ্ন পূরণ সম্ভব তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন অ্যাথলিট স্বপ্না। এবার তাঁর হাতেখড়ি লোকগান (Folk Song) ভাওয়াইয়া সংগীতে।
মাঠের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে নতুন এক পরিচয় তৈরি করছেন স্বপ্না। বর্তমানে তাঁকে দেখা যাচ্ছে সংগীতশিল্পীর ভূমিকায়! নেট দুনিয়ায় নতুন সেনসেশনও বলা যেতে পারে তাঁকে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) তাঁর গাওয়া ভাওয়াইয়া গান ভাইরাল হয়েছে। প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁর ভক্ত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। পারিবারিক অসচ্ছলতা তাঁকে অ্যাথলিট (Athlete) বানালেও ছোট্ট স্বপ্নার ভেতরকার শিল্পী কোথাও যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, মাঠের থেকে বিরতি নিয়ে বর্তমানে তিনি মজেছেন সংগীতে। তাহলে কি মাঠকে বিদায় জানিয়েছেন সোনার মেয়ে? স্বপ্নার উত্তর, না মাঠে নামার সঙ্গেই চলছে সংগীতচর্চা। সামনে বড় কোনও ইভেন্ট নেই। তাই বেশি সময় কাটছে গানের সঙ্গে।
রাজ্য-দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতীয় হেপ্টাথলিট হিসেবে তাঁর কৃতিত্ব অসামান্য। ২০১৭ সালে এশিয়াড ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন স্বপ্না। এরপর ২০১৯-এ অর্জুন পুরস্কারও অর্জন করেন তিনি। ২০২২-এ ন্যাশনাল গেমসে (National Games) হাইজাম্প ও হেপ্টাথলনে (Heptathlon) ফের স্বর্ণপদক হাতে ওঠে তাঁর। সময় বদলেছে। স্বপ্নার পরিচয় শুধু একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবেই আর আটকে নেই। এখন নিজেকে মেলে ধরেছেন একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসাবে।
স্বপ্নার কথায়, ‘খেলাধুলো আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আবার আমাদের মাটির গান গাইতেও আমার ছোট থেকেই ভালো লাগে। আগে সারাক্ষণ মাঠে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সময় দিয়েছি। এখন প্র্যাকটিসের চাপ কম তাই গান গাওয়া হয় টুকটাক। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার একটি গান পোস্ট করার পর সেটাতে সকলের পজিটিভ ফিডব্যাক দেখে একটু ভরসা পাই। এরপর থেকে সময় পেলেই গান আপলোড করি। এমন না যে হঠাৎ করে এখন এসে গান শুরু করেছি। আমি ছোট থেকেই গান করে চলেছি। হ্যাঁ সেটা কখনও কারও সামনে করিনি এটাই যা।’ ভাওয়াইয়া গান তাঁর কাছে মাটির গান। আর এই গান শুনেই তিনি বড় হয়েছেন। তাই ওই গানই গান স্বপ্না। সোনার মেয়ের কথায়, ‘মানুষের ভালোবাসা এভাবে পেতে থাকলে ভবিষ্যতে নিজের গানের কিছু ভাবতেই পারি।’ তবে অ্যাথলিট স্বপ্না মাঠ ছাড়ছেন না সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনায়াসে।