শিলিগুড়ি: গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনেস্ট্রেশন (জিটিএ) এলাকায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য এসেছে। বৃহস্পতিবার সেই তথ্য কলকাতা হাইকোর্টের কাছে সিবিআই রিপোর্ট আকারে পেশ করতে চলেছে।
রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) কাছ থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বিগত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সিবিআইয়ের একটি দল তদন্তের স্বার্থে পাহাড়ে আসতে পারে। স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সম্ভাবনা রয়েছে। শিলিগুড়িতেও কয়েকজন শিক্ষক নেতাকে সিবিআই জেরা করতে পারে বলে খবর।
জিটিএ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসাবে কাজ না করা এমন অনেককে শিক্ষক হিসেবে দেখিয়ে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। পাহাড়ের এই নিয়োগ দুর্নীতিতে একাধিক স্কুলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির কর্মকর্তাদের যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
জিটিএ এলাকায় ২০১৭ সালে প্রায় ৪৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষককে স্থায়ীকরণ করা হয়। সেই স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের অধিকাংশের বয়স ৪৫ বছরের আশপাশে ছিল। মাইনে সামান্য হওয়ায় যাঁদের মধ্যে অনেকে ২০১৭ সালের আগে স্কুলে পড়ানো বন্ধ করে দেন। সেখানেই দুর্নীতির সূত্রপাত। যে শিক্ষকরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। অভিযোগ, ওই স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের প্রায় সমবয়সি কিছু ভুয়ো প্রার্থীকে চাকরির জন্য টোপ দেওয়া হয়। সেখানেই হয় লেনদেনের কথা।অভিযোগ, ওই ভুয়ো প্রার্থীদের নামে পুরোনো তারিখে স্কুল থেকে কাগজপত্র বের করা হয়। যেমন, কতদিন ধরে কাজ করছেন, নিয়োগের সুপারিশপত্র সহ বিভিন্ন কাগজপত্র পুরোনো তারিখে বের করা হয়েছিল। যেখানে স্বাক্ষর করেন বিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। সেইসব তথ্য নিয়ে ভুয়ো প্রার্থীরা শিলিগুড়িতে আসেন। শিলিগুড়ির শিক্ষা জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বর্তমানে জেলবন্দি সুবীরেশ ভট্টাচার্য সেই নথিপত্র খতিয়ে দেখে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই তালিকা অনুযায়ী পাহাড়ে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়।
লোকসভা নির্বাচনের মাঝেই জিটিএ এলাকায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্য সরকার থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এফআইআর-এ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জিটিএ’র প্রাক্তন প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাং, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের নাম রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই নিয়োগ দুর্নীতির পেছনে অনেক রাঘববোয়াল রয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় যাঁদের নাম সামনে আসতে চলেছে।