চাঁচলঃ এক শিক্ষিকাকে স্কুলে ডেকে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের নাম করে চলে সালিশি সভা! ওই সভাতে শিক্ষকাকে অপদস্থ করা হয় বলে অভিযোগ। এরপরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন ওই শিক্ষিকা। বর্তমানে ওই শিক্ষিকা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রধানশিক্ষক এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে চাঁচল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষিকার স্বামী। এদিনের ঘটনায় আতঙ্কিত স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারাও। যদিও শিক্ষিকার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক।
শুক্রবার এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে চাঁচল ১ নং ব্লকের খড়বা এগ্রিল হাই স্কুলে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে শনিবার। জানা গিয়েছে, শুক্রবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ হোসেন স্কুল চলাকালীন একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের জন্য ডেকে পাঠান স্কুলের শরীর শিক্ষার শিক্ষিকা বিউটি খাতুনকে। সেই বৈঠকে প্রধান শিক্ষক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি এবং সদস্যরা। বৈঠক চলাকালীন ঘর থেকে ওই শিক্ষিকা কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে যান। এসে সহকর্মীদের জানান তাকে প্রচন্ড অপদস্থ করা হয়েছে। তারপরই শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা শুরু হয় তার। সহকর্মীরা শিক্ষিকাকে সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে খড়বা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান বিউটি খাতুনকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিক্ষিকাকে রেফার করা হয় চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। এই মুহূর্তে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই শিক্ষিকা।
এদিকে শনিবার অসুস্থ শিক্ষিকার স্বামী চাঁচল থানায় প্রধান শিক্ষক শেখ হোসেন, পরিচালন কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল সহ অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ, বৈঠকের নাম করে ঘর বন্ধ করে শিক্ষিকার ওপরে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন কমিটির সদস্যরা। বিউটি খাতুনের স্বামী সরিফুল ইসলামের অভিযোগ, ‘দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর স্ত্রীকে নানাভাবে হেনস্থা করছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি নানান কারণ দেখিয়ে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন।’ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন না। কিছু হলেই পরিচালন কমিটি এবং অভিভাবকদের ডেকে এইভাবে সালিশি সভা বসিয়ে দেন। যদিও সমগ্র অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক এবং পরিচালন কমিটির সভাপতি।
স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা রুমানা ইয়াসমিন এই প্রসঙ্গে জানান,”এদিনের ঘটনা দেখে আমরা আতঙ্কিত এবং স্কুলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। কিছু হলে প্রধান শিক্ষক আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই ধরনের সালিশি সভার মত বসিয়ে দেন।” গণিত শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন,” আমি সেই সময় নামাজ পড়তে গেছিলাম। এসে দেখি বিউটি খাতুন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বারবার বলছেন আমাকে ওরা খুব অপদস্থ করল। আমরা স্কুলে খুব বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
প্রধান শিক্ষক শেখ হোসেনের বক্তব্য,”কাল আমার সঙ্গে উনার দেখা হয়নি আমি নামাজ পড়তে গেছিলাম। পরিচালন কমিটির সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যরা কথা বলেছেন। আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ। নিজের দোষ ঢাকতে এসব করছেন শিক্ষিকা বিউটি খাতুন।”
পরিচালন কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিলের দাবি,”গতকাল স্কুলের রেজাল্ট ছিল। জানতে পারি দুইটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকারা খাতা দেখে নম্বর জমা করেননি। তার মধ্যে উনি একজন তাই ডাকা হয়েছিল। নিজের দোষ ঢাকতে এসব করছেন উনি।”
এক অভিভাবক মলয় বসাক বলেন, “আমি কাল আমার ছেলের মার্কশিট নিয়ে এসেছিলাম। উনার সঙ্গে কি হয়েছে বলতে পারব না। তবে পড়ানোতে শিক্ষিকার অনেক গাফিলতি আছে। হয়তো সেই দোষ ঢাকতে এই ধরনের অভিযোগ করছেন।”