হরিশ্চন্দ্রপুর: চাঁচলের পর এবার হরিশ্চন্দ্রপুর। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া চলাকালীনই হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরের ভেতরে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের ওপর ব্লেড, চাকু ও রড দিয়ে হামলার অভিযোগ উঠল জোট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। এমনকি এলাকায় রোগী আনতে গিয়ে কুশিদা প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারের এক অ্যাম্বুল্যান্স চালককেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে জোট সমর্থকদের বিরুদ্ধে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জোট প্রার্থীরা।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ছিল কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। অভিযোগ, বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া চলাকালীন জোটের জয়ী প্রার্থীরা আচমকাই তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শাসকদলের ছয়জন জয়ী প্রার্থী রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের উদ্ধার করে কুশিদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একজনকে মালদায় রেফার করা হয়েছে। বাকি পাঁচজন প্রার্থী কুশিদা গ্রামীণ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৮টি আসনের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছে ৯টি, বাম-কংগ্রেস জোট ১১টি, নির্দল ৪টি ও বিজেপি ৪টি আসন পায়। ত্রিশঙ্কু এই গ্রাম পঞ্চায়েত কার দখলে যায়, নজর ছিল সকলের। জয়ী নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে পঞ্চায়েত গঠনের লক্ষ্য নিয়েছিল জোট। এতেই তৃণমূলের হাতছাড়া হয়ে পড়ছিল পঞ্চায়েত। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিজেপির সমর্থন নিয়ে তারাই পঞ্চায়েত গড়ত। তার মাঝেই গোটা ঘটনা নিয়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বোর্ড গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত রয়েছে দুই শিবিরেই। প্রশ্নের মুখে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা। তৃণমূলের অভিযোগ, কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও ধারালো অস্ত্র নিয়ে কীভাবে জোটের প্রার্থী প্রবেশ করল পঞ্চায়েত দপ্তরের ভেতরে। গণ্ডগোল চলাকালীন কেনই বা পদক্ষেপ করল না পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে কুশিদাগামী রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ ও র্যাফকে ঘিরেও চলতে থাকে বিক্ষোভ। ঘণ্টাদুয়েক পর পুলিশ ও স্থানীয় নেতৃত্বের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেন তৃণমূল কর্মীরা। এই সংঘর্ষের ঘটনায় পড়ে জোট সমর্থকদের হাতে মার খান কুশিদা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালক হৃদয় ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে রোগী আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাকেও মারধর করে। শেষে পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছে।’
যদিও জোট প্রার্থীদের দাবি, তৃণমূলের পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলেই তাঁরা নিজেদের মধ্য গণ্ডগোল পাকিয়ে জোটকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে। তবে তাদের চক্রান্ত বিফলে যাবে। হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তজমুল হোসেন এই হামলার পেছনে সরাসরি জোট সমর্থক এবং জোট নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিংসা ছাড়ানোর জন্যই তারা আমাদের প্রার্থী এবং সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারি চাই।’
যদিও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জামিল ফিরদৌস বলেন, ‘আমাদের কোনও সমর্থক বা প্রার্থী তৃণমূলের ওপর হামলা চালাননি। ওরা নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল পাকিয়েছে। এখন আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে আমাদের সদস্যদের ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে।’
এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক আলম বলেন, ‘এগুলো শাসকদলের পুরোনো খেলা। এর আগে বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতের লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে বোর্ড গঠন বানচাল করতে চাইছিল। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। কুশিদাতেও তাই করার চেষ্টা করে সফল না হওয়াতে সাজানো হামলার ঘটনা তৈরি করেছে।’ হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।