নয়াদিল্লি: মে মাসের সেই পরিচিত কাঠফাটানো গরম উধাও। শাহি দিল্লির আকাশে এখন ঘন-কালো মেঘ, বৃষ্টির মৌরসিপাট্টা। আর এমন বৃষ্টির দিনেই যে ‘ভূতের গল্প’ জমে বেশি, তা কে না জানে! রাজধানী দিল্লির এহেন ‘খুসনুমা মৌসমে’র সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহরে আগত জি-২০ পর্যটকদের টানতে অভিনব উদ্যোগ নিল দিল্লি ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট। শনিবার বারবেলা থেকে তারা শুরু করতে চলেছে ‘হন্টেড ওয়াক’, যা মূলত দিল্লির ভুতুড়ে স্থানগুলি পায়ে হেঁটে পরিভ্রমণ করার এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। দিল্লি ট্যুরিজমের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘রাজধানী দিল্লির অলিতে-গলিতে লুকিয়ে রয়েছে রহস্য, ভয়, কায়াহীনদের অমোঘ হাতছানি। আজও মানুষেরা সেই সব স্থান ঘুরে দেখতে রোমাঞ্চ বোধ করেন।’
এই মুহূর্তে শহরে চলছে ‘জি-২০ সামিটে’র বর্ণাঢ্য আয়োজন। দেশবিদেশ থেকে ভিড় জমিয়েছে বহু পর্যটক। অকালবৃষ্টিতে ভেজা শাহি দিল্লিতে ভূতের হদিশ চাক্ষুস করার এমন সুযোগ বারবার আসবে না বলেই জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। তার মতে, দিল্লি জুড়ে আজও রয়েছে বহু রহস্যময় ভুতুড়ে স্থান, যার মধ্যে রয়েছে তুঘলকাবাদ ফোর্ট, ভুলি ভাটিয়ারি, আরাবল্লী রিজ, সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক এবং ফিরোজ শাহ কোটলার মতো এলাকা, যেখানে কান পাতলে আজও কায়াহীনদের অস্তিত্বের আভাস পাওয়া যায়৷ রয়েছে একাধিক প্রাচীন মোগল স্থাপত্য, বাউলি, পুরনো কেল্লার মতো জায়গা যা নি:সন্দেহে ভুতুড়ে বলে দাবি করেন ভূত বিশেষজ্ঞরা। এবার সেই সব স্থানই ‘হেরিটেজ ওয়াকে’ পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখানো হবে বিদেশী পর্যটক তথা উৎসাহি জনতাকে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দিল্লি ট্যুরিজমের ওয়েবসাইটে গিয়ে মাথাপিছু ১০০০ টাকার টিকিটে যে কেউ এই অভাবনীয় অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারেন। শনিবার, ৬ মে সন্ধ্যে সাতটা থেকে আরম্ভ হবে এই ‘হন্টেড ওয়াক’। চলবে প্রায় গোটা মে মাস জুড়েই৷ প্রথমদিন দিল্লির ‘ডিপ্লোম্যাটিক জোন’ এর মধ্যে স্থিত জঙ্গুলে পরিবেশে গড়ে ওঠা লখনউয়ের নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের পারিবারিক সম্পত্তি, তুঘলক জমানায় গড়ে ওঠা, অধুনা পরিত্যক্ত সেই কুখ্যাত ‘মালচা মহলে’ যাবেন দর্শনার্থীরা। ‘মালচা মহল’ দিল্লির অন্যতম কুখ্যাত ভুতুড়ে স্থান হিসেবে পরিচিত। এরপর একে একে হজ খাস, কনট প্লেস, শাহজাহানাদ ঘুরে দেখানো হবে এই ‘হন্টেড ট্রিপে’। তবে এই ‘হন্টেড ওয়াক’ থেকে দূর্বল হৃদয়ের ব্যক্তিরা যাতে বিরত থাকেন, তার জন্য ঘোষণাও করা হয়েছে ট্যুরিজম বিভাগের তরফে।
সেই সব অতৃপ্ত অশরীরীদের চাক্ষুস করতে হলে, সর্বোপরি বুকের পাটা থাকলে এই ভুতুড়ে সফরে স্বাগত যে কেউ, জানিয়েছে দিল্লি ট্যুরিজম। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতিমধ্যেই ‘হন্টেড ওয়াক’ এ অংশ নিতে উপচে পড়েছে আবেদন যা সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন ট্যুরিজম আধিকারিকরা। বিজ্ঞান মনস্ক সময়ে ভূতেদের ‘টিআরপি’ আজও ঊর্ধ্বমুখী তা একবাক্যে স্বীকার করেছেন সকলেই।