ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার বয়স ১০ বছর। তবে এখনও এইচআইভি (HIV) পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। জেলায় অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্ট সেন্টার (এআরটি) তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে অনেকে বারবার কোচবিহারে (Cooch Behar) গিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইছেন না। ফলে প্রতিবছর জেলায় এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলায় এই সংখ্যাটা এক হাজারের মতো।
আলিপুরদুয়ারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, এআরটি সেন্টার হলে একই ছাদের নীচে চিকিৎসক থেকে ল্যাব টেকনিসিয়ান, স্বাস্থ্য আধিকারিক, কাউন্সেলর সহ সব পরিষেবাই মিলবে। তাহলে এতদিনেও তৈরি হয়নি কেন? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, ‘ইতিমধ্যে বিষয়টি রাজ্যকে জানানো হয়েছে। তবে এখনও কোনও উত্তর মেলেনি। আশা করছি, দ্রুত এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ভবন পদক্ষেপ করবে।’
আলিপুরদুয়ারে এখন কতজন এইচআইভি পজিটিভ রোগী রয়েছেন, স্বাস্থ্য দপ্তর সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। কিন্তু দপ্তরেরই একটি সূত্রে খবর, গত তিন-চার বছরে জেলায় রেকর্ড পরিমাণ মানুষ এইচআইভি পজিটিভ হয়েছেন। ২০১৯ সালে জেলায় এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৩১১। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪১৩। ২০২১ সালে ৭১৫ জন, আর ২০২২-’২৩ সালে প্রায় ১২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আবার ৮০ জনেরও বেশি শিশু। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তরা ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সি।
সাধারণত আইসিটিসি টেস্টে এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়লে তাঁকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে কাউন্সেলিং করা হয়। হাসপাতালের আইসিটিসি কেন্দ্রে একজন পরামর্শদাতা থাকেন। কিন্তু জেলায় এআরটি সেন্টার না থাকায় তাঁদের কোচবিহারে ছুটতে হয়। বীরপাড়া, মাদারিহাট, জয়গাঁ থেকে অনেকেই এতটা দূরে চিকিৎসা করাতে যেতে চান না। ফলে জেলায় প্রতিবছর এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু চিকিৎসা পরিকাঠামোয় কোনও পরিবর্তন আসেনি। বা বলা ভালো, পরিকাঠামো তৈরিই হয়নি। আলিপুরদুয়ারের একটি সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা ল্যারি বসু বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরে এই নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু চিন্তার বিষয়, জেলায় একটাও এআরটি সেন্টার নেই। এসবের পেছনে দায়ী প্রশাসনের গাফিলতি। এরপর আমরা সিএমওএইচের অফিস ঘেরাও করব।’
অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে আলিপুরদুয়ার জেলায় এইচআইভি স্ক্রিনিং টেস্টও বন্ধ। আর স্বাস্থ্য দপ্তর বিষয়টি নিয়ে এতটাই উদাসীন যে, আক্রান্তদের সঠিক পরিসংখ্যান তো দূর, রোগীদের বিষয়ে তারা কোনও খোঁজখবরও নেয় না।