কালিয়াগঞ্জ: মাধ্যমিকে কম নম্বর পাওয়ার গ্লানি দু’বছর পর এক নিমেষে ধুয়ে গেল। পারিবারিক অর্থ সংকট যেন হার মানল কালিয়াগঞ্জের প্রীতম্বর বর্মনের (Pritambar Barman) লড়াইয়ের কাছে। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে (HS Result 2024) ৪৮৮ পেয়ে রাজ্যে নবম স্থান অধিকার করেছে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের তরঙ্গপুর নন্দকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র প্রীতম্বর বর্মন। তার এই ফলাফলের জন্য স্কুলের শিক্ষক ও বাবা ও মায়ের অবদান এক বাক্যে স্বীকার করেছে প্রীতম্বর। রাজনীতিতে আগ্রহী প্রীতম্বর আগামীতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে একজন আইএএস (IAS) হতে চায়।
মোস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেউরে বাড়ির বাসিন্দা প্রীতম্বরের বাবা উত্তম বর্মন একজন পরিযায়ী শ্রমিক। নেপালে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন তিনি। মা তরুলতা বর্মন অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে আয় করেন। দিদি শিলিগুড়ির একটি কলেজে পড়াশোনা করছেন। ছোট বোন এবার মাধ্যমিক দেবে। বৃদ্ধা ঠাকুমার তত্ত্বাবধানে চলছে এই সংসার। তরুলতাদেবী ছেলের ফলাফলে আপ্লুত হয়ে জানান, ‘আমাদের অর্থ নেই। কিন্তু, কাজ করার মানসিকতা রয়েছে। প্রতিদিনের হাড় ভাঙা খাটনির জের আজ আমার ছেলে পুষিয়ে দিয়েছে। আগামী দিনেও আমরা আমাদের সন্তানদের পাশে এভাবেই থাকব।’
টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের বারান্দায় বসে প্রীতম্বর আবেগ ভরা গলায় বলেন, ‘মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলাম। তখন মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হই। জেদ চেপে গিয়েছিল ভালো রেজাল্ট করার। আজ আমার আশা পূর্ণ হল। বাংলায় ১০০, ইংরেজি’তে ৯৩, এডুকেশনে ৯৮, ভূগোলে ৯৮, ফিলোসোফিতে ৯৯ এবং সংস্কৃতে ৮১ নম্বর পেয়েছি।’
ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবাকে তার উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল জানাতেই ফোনের ওপার থেকে কেঁদে ফেলেন উত্তমবাবু। তাঁর কথায়, ‘খুব খুশি আমি। ঈশ্বর ওর মঙ্গল করুক। আমি চাই প্রীতম্বর বড় অফিসার হয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াক।’
সারা বছর চারজন গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা। সেই সময় তেমন জোর দিয়ে না পড়লেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দেড় মাস আগে থেকে প্রায় ১৬ ঘন্টা পড়াশোনা করত প্রীতম্বর৷ রাতই ছিল তার পড়াশোনার আদর্শ সময়। তরঙ্গপুর নন্দকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার রায়ের বক্তব্য, শহরের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি গ্রামীণ ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন হতে শুরু করেছে। গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষকরাও সমান পারদর্শীতার সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের রাজ্য পর্যায়ে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তৈরি করতে কার্পণ্য করেন না। তাই, গ্রামীণ এলাকার স্কুল থেকেও এমন নক্ষত্রের সৃষ্টি হচ্ছে।
