রায়গঞ্জঃ পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়! পরিচারিকার কাজ করেই তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার প্রতিপালন করছেন মা। স্বামীও পরিবারকে অথৈ জলে ফেলে নিখোঁজ হয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। এই পরিস্থিতিতে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলেন রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন দক্ষিণ গোয়াল পাড়ার বাসিন্দা মিনতি শীল। আর সেটাই কাল হল মহিলার। জোর করে নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে গ্রেপ্তার হলেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিয়ের দশ দিনের মাথায় ওই নাবালিকা বধূকে প্রাণে মারার চেষ্টা করে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। কোনওক্রমে পালিয়ে মেয়েটি চলে যায় রায়গঞ্জ থানায়। মেয়েটির অভিযোগ শোনামাত্রই পুলিশ সর্বপ্রথমে গ্রেপ্তার করে তাঁর মা’কে। তবে মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নাগাল পায়নি পুলিশ। মঙ্গলবার এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের নরমকলোনী সংলগ্ন কাঁঠালডাঙ্গিতে।
জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন দক্ষিণ গোয়াল পাড়ার বাসিন্দা নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে হয় রায়গঞ্জ থানার গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁঠাল ডাঙ্গির বাসিন্দা চন্দন দাসের। বিয়ের ১২ দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নাবালিকা বধূ পালিয়ে আশ্রয় নেয় রায়গঞ্জ থানায়। মেয়েটির অভিযোগ, তাঁর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তাঁর মা মিনতি শীল জোর করে বিয়ে দেয় অসম বয়সী চন্দন দাসের সঙ্গে। এত অল্প বয়সে বিয়ে করতে বারংবার আপত্তি করলেও তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে মেয়েটি জানায় সে পড়তে চায়।
শ্বশুরবাড়ি থেকে কেন পালিয়ে আসে? এই প্রশ্ন করতেই মেয়েটি পুলিশকে জানায়, বিয়ের পর সহবাসে আপত্তি করলেই তাঁর ওপর শুরু হয় শ্বশুরবাড়ির লোকেদের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। বলপূর্বক সহবাসের চেষ্টা করার পাশাপাশি প্রাণে মারার চেষ্টা করেন তাঁর স্বামী চন্দন দাস ও তাঁর পরিবারের লোকেরা। মঙ্গলবার রাতে অত্যাচার চরমে উঠলে কোনওক্রমে পালিয়ে দ্বারস্থ হয় রায়গঞ্জ থানায়। নাবালিকা বধূর বক্তব্য, ‘আমি বাড়িতে যাব না। সরকারি হোমে থেকে পড়াশোনা করব। না হলে আমার মা ফের ওই ছেলের সঙ্গে সংসার করার চাপ দেবে। আমি সরকারি হোমে থেকে পড়াশোনা করতে চাই। বর্তমানে ওই নাবালিকা বধূ রয়েছে রায়গঞ্জ থানার পুলিশি হেফাজতে।
এদিকে, মেয়েটির কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই রায়গঞ্জ থানার পুলিশ প্রথমে হানা দেয় মেয়েটির বাড়িতে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মেয়েটির মা মিনতি শীলকে। পরে পুলিশ হানা দেয় মেয়েটির শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে গিয়ে পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বিপদ বুঝে সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী চন্দন দাস ও তাঁর পরিবারের লোকেদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট, বধূ নির্যাতন, ও পকসো আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর নাবালিকার মা মিনতি শীল বলেন “পাঁচ বছর আগে স্বামী নিখোঁজ হয়েছে, দুই মেয়ে এক ছেলে। মানুষের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতে হয়। বড় মেয়ে দেবীনগর কৈলাশচন্দ্র রাধারানী বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। নাবালক ছেলে স্কুলে পড়াশোনা করে। পরিচারিকার কাজ করে তিনজনের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিলাম না। অবস্থাসম্পন্ন ভালো ছেলে পেয়েছিলাম, সেই কারণেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। এমন পরিণতি হবে ভাবিনি।”