শিলিগুড়ি: শিলিগুড়িতে হাসমি চক সংলগ্ন বিধান রোডের নির্মীয়মাণ বিতর্কিত বাড়িটি কি শেষ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়ে যাবে? শুধু শিলিগুড়ি নয়, রাজ্যের অন্য জায়গাতে স্রেফ সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে বৈধ হয়ে যেতে পারে বেআইনি নির্মাণ। বিল্ডিং আইনে রাজ্য সরকারের সর্বশেষ সংশোধনীতে সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ।
শুধু বিরোধীরা নয়, শাসকদলের কোনও কোনও নেতাও বলতে শুরু করেছেন, ‘জরিমানা’র জেরে মিলে যেতে পারে বেআইনি নির্মাণের ছাড়পত্র। যাঁর অর্থের জোর আছে, তিনি অনায়াসে এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্মাণের সামান্য অংশ প্ল্যান বহির্ভূত হলে পুরসভা বা পুরনিগম নিযুক্ত কমিটি নির্মাণকারীকে ‘উপযুক্ত’ ফি জমা করতে বলতে পারে। সেই ফি জমা হওয়ার পর বিল্ডিংয়ের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
যদিও শিলিগুড়ি পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের বক্তব্য, কোনও বিল্ডিংয়ের অর্ধেক অংশই বেআইনিভাবে নির্মিত হলে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। একমাত্র আংশিক বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে। ঘটনা যাই হোক, সরকারি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছে। বুধবার শিলিগুড়ি পুরনিগমের মাসিক বোর্ডসভায় বাম কাউন্সিলাররা শহরে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিষয়টি জানাজানি হয়।
শিলিগুড়ি পুরনিগমে সিপিএমের দলনেতা মুন্সী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের পয়সা আছে, তাঁরা এই নিয়মের ফাঁকে বেআইনি নির্মাণকে আইনি করে নেবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগ থেকে যায়। সেজন্য এ ধরনের আইন না থাকাই বাঞ্ছনীয়।’ বিরোধী পক্ষের পাশাপাশি শিলিগুড়ির তৃণমূল কাউন্সিলার রঞ্জন শীলশর্মার বক্তব্য, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটের যে বেআইনি নির্মাণটিতে মানুষের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা, এই আইন সেই নির্মাণটিকে বৈধতা দিতে সাহায্য করবে। এই বিল্ডিং নির্মাণে ওই আইনের বলে আর কোনও বাধা থাকল না।’
এই বিতর্ক এড়াতে আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা উঠে এসেছে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের কথায়। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে কমিটি তৈরি হওয়ার কথা, তাতে তিনি থাকতে চাইছেন না। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি শহরে একজন কাউন্সিলার, পুরসভা বা পুরনিগমের এগজিকিউটিভ অফিসার, ফিন্যান্স অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি চেয়ারম্যান বা মেয়র ও ভাইস চেয়ারম্যান বা ডেপুটি মেয়রের থাকার কথা ওই কমিটিতে।
গৌতম বলেন, ‘নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কোনও বিল্ডিংয়ে সামান্য অনিয়ম থাকলে পরবর্তীতে অনুমোদন দিতে পারবে পুরনিগম। কিন্তু আমরা ঠিক করেছি, আমাদের বিল্ডিং কমিটির ধাঁচে সরকারি আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির প্রস্তাব আমরা বোর্ডসভায় পেশ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এরপর কোনও সমস্যা থাকলে আমরা সরকারের কাছে পাঠাব।’ তাঁর বক্তব্য, ‘সরকারের নীতি ভীষণ ভালো। তবে আইনের অপব্যবহার যেন না হয়, সেটা দেখতে হবে।’