ভাস্কর বাগচী ও সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি : এত চেষ্টা, তবুও শিলিগুড়িকে নেশার কবল থেকে মুক্ত আর করা যাচ্ছে কই! এবারে খোদ পুরনিগম পরিচালিত অতিথিশালা পান্থনিবাসকেই নেশার আসর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সমাজবিরোধীদের এই নেশার দাপটে পান্থনিবাসের নীচতলায় ব্যবসা করা ব্যবসায়ীরা রীতিমতো অতিষ্ঠ, আতঙ্কিত। তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি, নেশাগ্রস্তদের দাপটে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। অভিযোগ, বিষয়টি বহুবার পুরনিগমে জানানো হলেও এবিষয়ে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। কী কারণে পুরসভার এহেন উদাসীনতা সে বিষয়ে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেয়র পারিষদ রাজেশ প্রসাদ শা অবশ্য বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আমাদের সময়মতো জানালেই পদক্ষেপ করা যেত। এবিষয়ে পুলিশকে জানাব। পাশাপাশি, মেয়রের সঙ্গেও কথা বলব। তবে সমস্যা মেটাতে ব্যবসায়ীদের নিজেদেরও কিছুটা দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে নিরাপত্তারক্ষীর বন্দোবস্ত করতে হবে।’
নেশার প্রকোপের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। বাঘা যতীন পার্কই হোক বা সূর্যনগর মাঠ, অর্ডার করলেই মদের বোতল থেকে গাঁজা সহ নানা নেশার সামগ্রী হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে সাইকেলে ব্যাগ ঝুলিয়ে এসব পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দোকানে গিয়ে মদ কিনতে যে টাকা খরচ করতে হয়, এই ব্যবস্থায় তার থেকে প্রতি অর্ডারে ৫-১০ টাকা বেশি লাগলেও তাই-ই সই। কে আর কষ্ট করে দোকানে যেতে চায়। ফলে সাইকেলে এসব ডেলিভারির সংখ্যা সমানে বাড়ছে। মোবাইল ফোনে সাড়া না দেওয়ায় শিলিগুড়ির সহকারী পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) মকসুদুর রহমানের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। শিলিগুড়ি থানা সূত্রে অবশ্য খবর, এই ধরনের কোনও অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি, এই জাতীয় সমস্যা মেটাতে বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিতভাবে টহলদারিও চলে।
শিলিগুড়ি পুরনিগমের ঠিক উলটো দিকেই পান্থনিবাস। নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে এখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। গোটা বছর ধরেই এর বুকিং চলে। বাইরে থেকে এসে অনেকেই এখানে থাকেন। জায়গা হিসেবে যথেষ্ট ‘হাই প্রোফাইল’ হলেও এখানে নেশার দাপটে সবাই অবাক। রবিবার সকালে পান্থনিবাসের নীচে বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ ছিল। দু’চারজন দোকান খোলা রেখেছিলেন। সেখানে নেশার আসরের বিষয়টি উল্লেখ করতেই ওই ব্যবসায়ীরা পান্থনিবাসের পিছন দিকটায় নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি অংশে সীমানাপ্রাচীর নেই। ব্যবসায়ীরা জানালেন, চাকুপট্টির পাশাপাশি হকার্স কর্নার থেকে কয়েকজন এখানে এসে নিয়মিতভাবে নেশার আসর বসায়। এদের কেউ অটো বা টোটো চালায়, কেউবা পুরোপুরিভাবে বেকার। ব্যবসায়ী সমীর দেব বলেন, ‘এই ছেলেগুলি সকালের দিকে সামনে দিয়ে পান্থনিবাসে ঢুকে পেছনের দিকে গিয়ে সেখানে নেশার আসর বসায়। আমরা কিছু বলতে গেলে আমাদের ওপর তেড়ে আসে।’ পান্থনিবাসের পিছনের অংশটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আবর্জনা। শৌচালয়ের অবস্থাও খারাপ। সেখানেও আবর্জনার পাহাড়। আর তার মধ্যে চুটিয়ে নেশার আসর চলে।
অন্যদিকে, যেভাবে পাড়ায় পাড়ায় নেশার সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে তাতে শহরবাসীর উদ্বেগ বাড়ছে। বাঘা যতীন পার্ক, সূর্যনগর মাঠের পাশাপাশি বাল্মীকি মাঠ, বলাকা মাঠ, ক্ষণিক সংঘ, ভক্তিনগর পাইপলাইন সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিনই নেশাগ্রস্তদের আড্ডা বসে। সেখানে স্থানীয়দের দেখা মিললেও বহিরাগতদের সংখ্যাই বেশি। ইতিমধ্যেই পাড়ায় পাড়ায় গাঁজা সহ নানা নেশার সামগ্রী বিক্রির কারণে ভক্তিনগর থানার পুলিশ সম্প্রতি এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করে। শালবাড়ি থেকেও দুই মহিলাকে গাঁজা সহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, এই মহিলারা সামান্য টাকার বিনিময়ে পাড়ায় পাড়ায় নেশার সামগ্রী বিক্রি করত। দ্রুত পরিস্থিতি ঠিক করার দাবি জোরালো হয়েছে।