ময়নাগুড়ি: বেআইনিভাবে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকায় জাতীয় সড়কের পাশে রমরমিয়ে চলছে একাধিক ‘ওয়াটার আউটলেট’। প্রশাসনের নাকের ডগায় গত কয়েক মাসে এই ধরনের একের পর এক বেআইনি ওয়াটার আউটলেটের ব্যবসা গজিয়ে উঠলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বেআইনি ওয়াটার আউটলেট বন্ধ করার দাবি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
ময়নাগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ির দিকে যাওয়ার সময় তিস্তা সেতুর দু’পাশে চার লেনের মহাসড়ক লাগোয়া অংশে চোখে পড়বে এই ওয়াটার আউটলেটগুলি। মাটি খুঁড়ে মোটা পাইপ দিয়ে শক্তিশালী পাম্প ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়া হচ্ছে। এরপর সেই জল ট্যাংকে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। একটি বড় জলের ট্যাংক ভরতে নেওয়া হয় ৩০০ টাকা, মাছের গাড়ির ট্যাংকে জল ভরতে নেওয়া হয় ১০০ টাকা, পাথরবোঝাই ট্রাক কিংবা ডাম্পারের পাথর জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য নেওয়া হয় ২৫০-৩০০ টাকা। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে। বর্তমানে তিস্তা সেতুর দু’পাশে অন্ততপক্ষে পাঁচটি এমন ওয়াটার আউটলেট রমরম করে চলছে।
ওয়াটার আউটলেটের মালিকদের একজন বলেন, ‘বোরিং করে জল তোলা হয়। প্রথমে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর বিদ্যুৎ বিল ছাড়া আর কোনও খরচ নেই।’ লাভজনক ব্যবসা দেখে এলাকার অনেকেই এই ব্যবসায় নেমেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, এই ব্যবসার জন্য প্রশাসনের কোনও অনুমতির প্রয়োজন হয় না। আরেক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, এভাবে জল উত্তোলন করা বেআইনি কি না সেটা জানা নেই।
তিস্তা নদীর পার্শ্ববর্তী অংশে এই ধরনের আউটলেট তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক রূপককুমার পাল বলেন, ‘এভাবে জল তুলে নেওয়া হলে শুধুমাত্র ওই এলাকার জলস্তর কমবে তা নয়, ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে তিস্তার বেডের সঙ্গেও ভূগর্ভস্থ জলস্তরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তিস্তা নদী দিয়ে বরফগোলা জলের পাশাপাশি যে ভূগর্ভস্থ জল প্রবাহিত হয় সেই প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি, জলজ বৈচিত্র্যের ওপর বড় রকমের আঘাত নেমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’ একই রকম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান ডঃ মধুসূদন কর্মকার।
বঙ্গীয় ভূগোল মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক জাতিস্মর ভারতী বলেন,‘অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল তুললে আশপাশের কুয়ো শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অদূরভবিষ্যতে আর্সেনিক দূষণের সম্ভাবনা বাড়বে।’
বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন গ্রিন লেবেল সংগঠনের সম্পাদক অনির্বাণ মজুমদার ও ময়নাগুড়ি রোড পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদক নন্দু রায়।
নির্বাচনি বিধিনিষেধ জারি থাকায় বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জলপাইগুড়ি জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন বিভাগের কর্তারা। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক শামা পারভিন জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।