জয়গাঁ: কেউ তিনটে বিষয়ে ফেল, কেউ আবার দুটোয়। এদিকে পড়ুয়াদের দাবি, তাঁরা ফেল করার মতো পরীক্ষা দেয়নি। পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। জবাব চেয়ে জয়গাঁ ননী ভট্টাচার্য স্মারক মহাবিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখালেন পড়ুয়ারা।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of North Bengal) অধীনে থাকা কলেজগুলির ফলাফল। এই ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় জয়গাঁ ননী ভট্টাচার্য স্মারক মহাবিদ্যালয়ের প্রথম সিমেস্টারের ৯০ শতাংশ পড়ুয়াই ফেল। হিন্দি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ফেল করেছেন বেশিরভাগ পড়ুয়া।
জয়গাঁ ননী ভট্টাচার্য স্মারক মহাবিদ্যালয়ে প্রথম সিমেস্টারে পরীক্ষা দিয়েছেন ৮০০ জন। ৭০০ জন ফেল করেছেন বলে জানা গিয়েছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, প্রত্যন্ত এলাকার কলেজ বলেই তাদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। গতবছর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই কলেজের পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, অভিযোগ উঠছে এমনই। এই বিষয়ে কলেজের পড়ুয়া যোগেশ নায়েক বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকার কলেজ বলেই আমাদের সঙ্গে এমনটা হয়। আমরা নিজেরা জানি আমরা ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। পাশ করব এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম। এরকম ফল তো অপ্রত্যাশিত। এটা কিছুতেই মানতে পারছি না আমরা।’
এই কলেজে পড়াশোনা করতে আসেন কালচিনি, হ্যামিল্টনগঞ্জ, মাদারিহাট, কামাখ্যাগুড়ি, পলাশবাড়ির মতো এলাকার পড়ুয়ারা। শুধু আর্টস পড়ানো হয় কলেজে। কমার্স ও সায়েন্স বিষয় শুরু হয়নি। চা বলয়ের ছেলেমেয়েরা কলেজে বেশিমাত্রায় পড়াশোনা করে। রি-চেক করানোর জন্য বিষয় প্রতি ১০০ টাকা দেওয়া অসম্ভব তাদের কাছে। আর্থিক কষ্টের কারণে তারা টিউশন আলাদা করে নেয়না। কলেজে রোজ এসে পড়াশোনা করে তারা। এই বিষয়ে মর্জিনা খাতুন নামের এক পড়ুয়া বলেন, ‘আমার মতো অনেক পড়ুয়ার মা চা শ্রমিক। পড়াশোনার খরচ চালাতে টিউশন পড়াই। তারপরেও পড়াশোনা করতে চাই। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখি। খারাপ পরীক্ষা দিইনি। হয়েছি শুধু বঞ্চনার শিকার। খাতা ঠিকমতো দেখলেই পাশ করব আমরা।’
গত বছর থেকে পরীক্ষার ফল বের হবার পর এই চিত্র দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জয়গাঁ কলেজের পড়ুয়া মকসিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা আলাদা টিউশন নিতে পারি না অর্থের অভাবে। তাই কলেজের উপর নির্ভর করি। কলেজে যা পড়ানো হয় তাই লিখে আসি পরীক্ষার খাতায়। শুনেছি এই কলেজে হিন্দি নিয়ে যাঁরা পড়েন, তাঁদের বেশি ফেল করানো হয়। এবার তো ঠিক তাই হল। রি-চেক করতে দেব ঠিকই। কিন্তু কতটা কী হবে, বুঝতে পারছি না।’
এদিকে পড়ুয়াদের ফলাফল নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কলেজের অধ্যাপক ও অধ্যাপিকারা। ননী ভট্টাচার্য স্মারক মহাবিদ্যালয় অধ্যক্ষ বিনয়কুমার প্যাটেলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর কাছ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।