Saturday, May 4, 2024
Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গসিকিমের বিপর্যয়ে  শিলিগুড়ির খুচরো বাজারের ক্ষতি প্রায় ৩০০ কোটি

সিকিমের বিপর্যয়ে  শিলিগুড়ির খুচরো বাজারের ক্ষতি প্রায় ৩০০ কোটি

শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : তিনদিনে ২৫০ কোটি। মঙ্গলবার মাঝরাতে সিকিমে বিপর্যয়ের পর তিনদিনে শিলিগুড়ির ব্যবসায় এই ক্ষয়ক্ষতি। এর মধ্যে শুধু শিলিগুড়ি শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকার খুচরো বাজারেরই হিসেব ২১০ কোটি টাকা। রবিবারের পর সেই ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা ছোঁবে বলে আশঙ্কা। সময় যতই গড়াচ্ছে পাল্লা দিয়ে ক্ষতির বহরও ততই বাড়ছে। সিকিম যাতায়াতে মূল রাস্তাটি যদি পুজো পর্যন্ত না খোলে তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিন গুণ বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা। পরিস্থিতির জের সেই করোনাকালের বিভীষিকাকে অনেকটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

বৃহত্তর শিলিগুড়ি খুচরো ব্যবসা সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায় মুহুরির কথায়, ‘ওই রাস্তাটি না খোলা পর্যন্ত শহর ও শহর সংলগ্ন ৯৪টি বাজার মিলিয়ে প্রতিদিন খুব কম করে হলেও ৬০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি চলতেই থাকবে বলে আমাদের আশঙ্কা।’ সমিতির হিসেব অনুযায়ী, পুজোর এই সময়টায় ৯৪টি বাজার মিলিয়ে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার ওপর ব্যবসা হয়। প্রকৃতির তাণ্ডবে এবারে তার প্রচণ্ডভাবে মার খাওয়া। অন্যরকম ক্ষতিও হচ্ছে। শিলিগুড়ি ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল কমিশন এজেন্ট অ্যাসোসিয়েনের (রেগুলেটেড মার্কেট) সম্পাদক শিব কুমার বললেন, ‘দুটো রাস্তা খোলায় সিকিমে সবজি নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। তবে খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে আগে একজন এক গাড়ি সবজি নিয়ে যেতেন। এখন দুই-তিনজন মিলে ভাগাভাগি করে এক গাড়ি সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।’ এই পরিস্থিতিতে অন্য সময়ের তুলনায় মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ সবজি সিকিমে যাচ্ছে বলে রেগুলেটেড মার্কেটের ফল ও সবজির আড়তদারদের হিসেব।

হার্ডওয়্যার ব্যবহার হালও খারাপ। শিলিগুড়ির হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীরা সিকিমের বাজারের ওপর অনেকটাই নির্ভর করেন। সেই ব্যবসা কতটা মার খেল তা বুঝতে শিলিগুড়ি হার্ডওয়্যার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে শনিবার এক আলোচনায় বসেন। সংগঠনের সহ সভাপতি সঞ্জয় গোয়েলের হিসেব, ‘শুধুমাত্র সেবক রোডের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ধরলে তিনদিনে ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা মার খেয়েছে।’ অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় ঘুরপথেও তাঁরা সিকিমে সেভাবে হার্ডওয়্যার সামগ্রী পাঠাতে পারছেন না বলে সঞ্জয়রা জানিয়েছেন।

শিলিগুড়ির সবজি, মুদিখানার সামগ্রী, জামাকাপড়ের ব্যবসা অনেকটাই সিকিমের ওপর নির্ভর করে। পাহাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এই শহরের বিধান মার্কেট, হংকং মার্কেটের মতো বাজারগুলি খুবই পছন্দের। শনিবার বিকেলে এই বাজারগুলিতে ঢুঁ মারতেই খাঁখাঁ পরিবেশ নজরে এল। বিধান মার্কেটে কাপড়ের দোকানে বসা অমিত সরকার বললেন, ‘সিকিমের ব্যবসায়ীরা আমাদের এখান থেকে কাপড় নিয়ে যান। এবারে ওই ব্যবসায়ীরা কাপড় নিতে পারছেন না। এর জেরে আমাদের ব্যবসায় অনেকটাই প্রভাব পড়ল।’ বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বাপি সাহার কথায়, ‘লকডাউনের থেকেও খারাপ পরিস্থিতি বলেই মনে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেন কান্নাকাটি করতে পারলে বাঁচেন।’

সত্যিই কি এবারের পরিস্থিতি করোনাকালের থেকেও খারাপ? চেম্বার অফ টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বৎসরাজ বোথরার বক্তব্য, ‘করোনা পরিস্থিতি দুঃস্বপ্নের মতন ছিল। তবে এই পরিস্থিতিও কোনও অংশে কম নয়। পুজোর এই মরশুমে প্রতিদিন ২৫ লক্ষ টাকার ব্যবসা ধাক্কা খাচ্ছে।  ক্ষতির অঙ্ক কোথায় গিয়ে ঠেকবে, জানা নেই।’ হংকং মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ভবতোষ সাহা বললেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির জেরে দোকান খোলা আর না খোলা সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিকিমে বিপর্যয়ের পর পাহাড়ের বাসিন্দারা তো আসছেনই না, পর্যটকদের যাতায়াতও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’

ঘুরপথে সিকিমের রাস্তা খোলায় কিছু কি আশার আলো কিছুটা হলেও দেখা যাচ্ছে? ফেডারেশন অফ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (এফসিসিআইইআই)-র সম্পাদক সুরজিৎ পালের বক্তব্য, ‘কিছু সবজি ও মুদিখানার সামগ্রী যাচ্ছে। কিন্তু আগের মতো নয়। তাছাড়া, সিকিমে এখন পর্যটকও নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই আগের মতো এসব পাঠানো হচ্ছে না।’ সঞ্জয় বললেন, ‘ঘুরপথে যেতে গিয়ে হার্ডওয়্যারের সামগ্রীর ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে প্রায় আট টাকা করে বেশি খরচ হচ্ছে। মূল রাস্তা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসা ঠিক হওয়ার নয়।’ বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অসিত দে বলেই দিলেন, ‘একমাস আমরা আর কোনওকিছু আশা করছি না। তাই শুধু দুর্গাপুজোই নয়, দীপাবলি পর্যন্ত এর প্রভাব থাকবে।’ ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস অবশ্য কিছুটা আশায়, ‘আশা রাখছি, খুব তাড়াতাড়িই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

অবশ্য নয়াবাজারের ব্যবসায়ীদের মুখে কিছুটা হাসি ছিল।  শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (নয়াবাজার) সম্পাদক সঞ্জয় সিংহাল বললেন, ‘যা আশঙ্কা করেছিলাম তার তুলনায় বেশি মুদিখানার সামগ্রী সিকিমে গিয়েছে। ফের দুর্যোগের আশঙ্কাতেই ওখানকার ব্যবসায়ীরা হয়তো এদিন কিছুটা বেশি করে এসব সামগ্রী পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছেন।’

Sourav Roy
Sourav Royhttps://uttarbangasambad.com
Sourav Roy working as a Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sud Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Dev’s road-show | তৃণমূল প্রার্থী প্রসূনের সমর্থনে রতুয়ায় দেবের রোড-শো, যানজটে নাজেহাল সাধারণ মানুষ...

0
রতুয়াঃ শুক্রবার উত্তর মালদার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে রোড শো করেন অভিনেতা দেব। এদিন অভিনেতার হেলিকপ্টার রতুয়া স্টেডিয়ামে দুপুর ১২ টা ৩০ নাগাদ...

Bengal Pro T20 League | উন্মোচন হল বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগের ট্রফির, প্রাক্তনীদের মঞ্চে...

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হবে বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ। শুক্রবার শহরের একটি হোটেলে দুই প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও...

High Madrasah result | হাই মাদ্রাসার ফলপ্রকাশ, ৭৭৮ নম্বর পেয়ে রাজ্যে প্রথম রামনগরের সাহিদুর

0
গাজোলঃ মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় আবার জয়জয়কার গাজোলের রামনগর হাই মাদ্রাসার। এবারে এই মাদ্রাসা থেকে রাজ্যের সম্ভাব্য প্রথম স্থান অধিকার করেছে সাহিদুর রহমান। তার প্রাপ্ত...

Achievement | ক্যানসার জয় করে মাধ্যমিকে সফল দিনহাটার রাখি, ছাত্রীর কৃতিত্বে খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ...

0
দিনহাটাঃ শরীরে বাসা বেধে ছিল মারণ রোগ ক্যানসার, কিন্তু তাতে দমানো যায়নি দিনহাটা জ্ঞানদাদেবী গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী রাখি খাতুনকে। সেই মারণ রোগকে জয় করেই...
cable of the crane broke, 3 workers were injured

সেতুর কাজ করতে গিয়ে ক্রেনের তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনা, জখম ৩ শ্রমিক

0
গয়েরকাটা: সেতুর কাজ করতে গিয়ে ক্রেনের তার ছিঁড়ে স্টিলের গার্ডারে চাপা পড়ে গুরুতর জখম হলেন ৩ শ্রমিক। এঁদের মধ্যে একজনের পা বাদ গিয়েছে। শুক্রবার...

Most Popular