প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ সোমবার ৩১ জুলাই রাজ্য বিধানসভায় মণিপুরে হিংসা তথা সন্ত্রাস নিয়ে বক্তব্য রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দাবি বিরোধী শিবির সূত্রে৷ ওইদিন বিধানসভায় প্রায় ৩০ মিনিট মণিপুরে হওয়া সাম্প্রতিক হিংসা এবং অস্থিরতা নিয়ে নিজের মতপ্রকাশ করবেন তৃণমূল নেত্রী৷ প্রথম কোনও বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রূপে এহেন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। এও জানা গেছে, মমতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এরপর একে একে সমস্ত অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা মণিপুর ইস্যুতে নিজ নিজ বিধানসভা পরিসরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন৷ মণিপুর নিয়ে সংসদে যখন জোট শিবিরের প্রতিনিধিরা অনাস্থা প্রস্তাব এনে কেন্দ্র সরকারকে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বেকায়দায় ফেলার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন, ঠিক সে মুহূর্তে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এহেন ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় শিবিরে।
প্রসঙ্গত, মণিপুর ইস্যুতে প্রথমদিন থেকেই সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিংসা-দীর্ণ উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্য মণিপুরে সশরীরে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করে, অনুমতির জন্য সরকারকে চিঠিও দেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর সেই প্রস্তাব খারিজ করলেও, এর পর বিভিন্ন পরিসরে মণিপুর নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এমনকি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বেঙ্গালুরুর অধিবেশনে বসে বিরোধী দলীয় মুখ্যমন্ত্রীদের মণিপুর সফরে যাওয়ার প্রস্তাবও দেন মমতা। সেই পরিকল্পনা, শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত না হলেও নিজের দলের পাঁচ সদস্যকে মণিপুর পাঠান তিনি। সেই সূত্রেই, শনিবার সকালে দিল্লি থেকে সরাসরি মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে উড়ে যাচ্ছেন ২৬ টি বিরোধী জোট দলের ২০ জন নেতা যার মধ্যে কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী, ডেপুটি লিডার গৌরব গগৈ, তৃণমূল কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব, জেডিইউ-র রাজীব রঞ্জন, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি, আরজেডি-র মনোজ ঝাঁ, ‘আপ’-এর সুশীল গুপ্তা, এনসিপি-র মহম্মদ ফয়জল, বাম নেতা এ আবদুল রহিম, আরএসপি-এর এন কে প্রেমচন্দ্রণ প্রমুখ। বিরোধী দলীয় শীর্ষ প্রতিনিধি রূপে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘মণিপুরের পাহাড় এবং সমতল, দুই ঘুরে দেখবেন প্রতিনিধিরা৷ হিংসা উপদ্রুত অঞ্চলে গিয়ে সাধারণ মানুষকে দেবেন পাশে থাকার বার্তা।’ শনিবার সকালে নয়াদিল্লি থেকে রওনা হয়ে রবিবার দুপুরে মণিপুর থেকে ফিরে আসবেন এই বিরোধী সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা, দাবি বিরোধী শিবির সূত্রে।
প্রহ্লাদ যোশী জানান, ‘সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত। বিরোধীরাই মণিপুর নিয়ে আলোচনা এড়াচ্ছেন। ক্ষমতা থাকলে সরকারের বিলগুলিকে চ্যালেঞ্জ করুক বিরোধীরা।’ এদিনও প্রবল হই-হট্টগোলের মাঝে লোকসভায় ‘মাইনস এণ্ড মিনারেল বিল, তথা ‘ন্যাশনাল নার্সিং বিল’ এবং ‘ন্যাশনাল ডেন্টাল কমিশন বিল’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল সংসদে পাস করিয়ে নেয় সরকারপক্ষ। এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে দাবি, আগামী সপ্তাহেই, খুব সম্ভবত ৩ অথবা ৪ অগাষ্ট লোকসভায় অনুষ্ঠিত হবে বিরোধী শিবির সূত্রে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা।