আসানসোলঃ সম্প্রতি মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আসানসোল শহরে তিনটি এলাকায় বাড়িতে একা থাকা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তিনজনেরই পচাগলা দেহের দুর্গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরা খবর পেয়ে থানায় জানান। এরপর পুলিশ এসে সেই মৃতদের উদ্ধার করে।
তারই মধ্যে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে এক অভিনব নির্বাচনী প্রচারে নামল পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের সালাপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস। এই ব্লকে ১১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২৮ টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ২ টি জেলা পরিষদের আসন রয়েছে। নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ও দলের নেতা ও কর্মীরা বাড়ি বাড়ি খোঁজ নেবেন এলাকায় কারা একা আছেন। তা তিনি মহিলা বা পুরুষ হোক না কেন। কোনও বাড়িতে বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা আছেন কি না, তারও খোঁজ নেওয়া হবে। অনেকেরই ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকেন। এমন যারা আছেন তাদের কাছে নিজেদের ফোন নম্বর নিচ্ছেন প্রার্থী ও শাসক দলের নেতারা। সেই সঙ্গে তারা নিজেদেরও ফোন নম্বর দিয়ে রাখছেন, যাতে মানুষেরা কোন কারণে যোগাযোগ করতে পারেন।
শুধু এই পদক্ষেপ নয় ইতিমধ্যেই সালানপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস অফিস থেকে বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের পরামর্শ মতো প্রায় হাজার দেড়েক দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীকে বই, খাতা সহ পড়াশোনার সামগ্রী কিনে দেওয়া হয়েছে। অনেকেরই টিউশনি বা গৃহশিক্ষকের ফি দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি শাসক দলের প্রার্থীরা এবারে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে খোঁজ নেবেন কোনও পরিবারে অর্থাভাবে কোন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে কিনা। যদি কেউ পড়তে না পারে বা বইপত্রের অসুবিধে থাকে তাহলে তাদেরও সহযোগিতা করা হবে।
কেন এই ভাবনা, তাও আবার ভোটের প্রচারে গিয়ে? এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সহ সভাপতি বিজয় ওরফে ভোলা সিং বলেন, করোনার সময় আমরা দেখেছি বিরোধী দলগুলো দলীয় অফিস বন্ধ করে রেখেছিল। আমাদের দলের অফিস থেকেই আমরা প্রতি দিন আক্রান্ত ও দুঃস্থ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। সেই সময় আমরা লক্ষ্য করেছিলাম চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা, হিন্দুস্থান কেবলস বা ইসিএল থেকে অবসর নেওয়া কর্মীদের এই ব্লকে ৫০ টির বেশি আবাসন আছে। যেখানে অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধারা একা থাকেন। কোথাও কোথাও একজন বৃদ্ধ বা একজন বৃদ্ধা আছেন এমন বাড়িও আছে। আমরা তখন তাদের খোঁজখবর রাখতাম। ওষুধ খাবার সহ অন্যান্য যা কিছু দরকার মতো পৌঁছে দিতাম। গ্রামে গ্রামে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এরা একা থাকেন। কারোর কোন ছেলেমেয়েরা নেই বা থাকলেও তারা বাইরে থাকেন। তাই প্রচারে গিয়ে প্রার্থী বা আমাদের কর্মীরা শুধু ভোটের কথা বলবেন তাই নয়। সেই সঙ্গে তারা আমাদের প্রকল্প গুলো সব পেয়েছেন কিনা, পাশাপাশি তাদেরকে আমাদের নম্বর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরাও তাদের ফোন নম্বর নিয়ে রাখছি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সালানপুর ব্লক সভাপতি ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহঃ আরমান বলেন, আমি নিজেই প্রার্থী হয়েছি। আমার এলাকায় এমন বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একা থাকেন। তাদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখি। আমরা সারা বছর মানুষের পাশে থাকি। সব মানুষের সমস্যার সমাধানের জন্য আছি। এজন্যই এবারের প্রচারে এই কাজকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
তৃণমূল ব্লক মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী অপর্না রায় বলেন, অরবিন্দনগরে আমার এলাকায় ৮৩ বছরের এক বৃদ্ধা আছেন। বিয়ের কারণে তার তিন মেয়ে বাইরে থাকেন। মাঝেমধ্যে তারা আসেন। তার কোনো অসুবিধা হলে আমি জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে পৌঁছে যাই। এবারেও আমি নিজে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী হিসেবেও আবারও তাকে বলে এসেছি। আমার ফোন নম্বর দেওয়া আছে। বলেছি কোন অসুবিধে হলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন।