শিলিগুড়ি: নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের (এনজেপি) কাছে ট্যাবলোতে চলছে মোদি সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রচার। প্রকল্পের থেকেও প্রচারে রাম মন্দিরের জয়ধ্বনিই যে বেশি, তা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তবে সেই প্রচার শোনার থেকেও সবার নজর ট্যাবলোর চালকের দিকে। হাসি মুখে সেও প্রচার শুনে চলেছে। রাম মন্দিরের প্রচারের সময় ওই ব্যক্তির হাসি মুখ কিছুটা হলেও অবাক করছিল আনন্দ রায়, বিকাশ সরকারকে। চালকের হাসিমুখ দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না বিকাশ। ওই ব্যক্তির কাছে গিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে বসলেন, ‘রাম মন্দিরের পর থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে জাতি বৈষম্যের অভিযোগ উঠছে। আপনার কী মত?’ বছর পঞ্চাশের মহম্মদ ইকবাল স্পষ্টভাবে বলে দিলেন, ‘যারা ভগবান, আল্লাহকে বোঝেন না, তাঁরাই জাতপাতের কথা বলেন।’
গত দশদিন ধরে ট্যাবলোর মাধ্যমে মেডিকেল মোড়, জালাস নিজামতারা, এনজেপি স্টেশনের বাইরে মোদির সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারের ট্যাবলো নিয়ে ঘুরেছেন মহম্মদ ইকবাল। জন্মসুত্রে বিহারের সিপোই জেলার বাসিন্দা হলেও তিরিশ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের মিরাটে রয়েছেন। তবে গত দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি মোদি সরকারের প্রচার সম্বলিত ট্যাবলো নিয়ে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ঘুরতে ব্যস্ত। কেমন লাগছে শহর? প্রশ্ন করতেই তিনি সংযোগ ঘটালেন ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে। সেখানে দুইমাসেরও বেশি সময় প্রচারে ছিলেন পেশায় গাড়ি চালক মহম্মদ ইকবাল। আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘ঝাড়খণ্ডের কোটোরমা, লাতিহারা জেলায় একমাস করে প্রচারে চালিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি, লোকজন প্রথমে আমাকে দেখে অবাক হয়েছে। তারপর আমার গলা জড়িয়ে ছবিও তুলেছে। অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।’ একই ধরনের ভালোবাসা শিলিগুড়িতেও পাচ্ছেন, জানালেন বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তি। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন কিভাবে? এর উত্তরে ইকবাল বলেন, ‘ট্রান্সপোর্টারের (Transporter) মাধ্যমেই এই কাজের সুযোগ পাই। কাজটা নিয়ে নিয়েছিলাম। এখন দেখছি, নিয়ে ভালোই করেছি। অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। ভালো লাগছে। অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি।’ তবে কোনওদিন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি? ইকবাল বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘কোনওদিন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। তবে অনেকে হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন। আমার স্পষ্ট কথা, আপনার ধর্ম আপনার কাছে। আমাদের ধর্ম আমাদের কাছে।’ তবে এসবের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের (Central Govt.) বিভিন্ন প্রকল্পের (Project)ব্যাপারটাও আরও ভালো মতন যে তিনি জেনে ফেলেছেন, সেটাও কথায় কথায় বোঝা গেল। একের পর এক বলে চললেন প্রকল্পের নাম, উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা, আয়ুষ্মান যোজনার সুবিধার কথা। এসব কিছুর মধ্যেই বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনির জেলা কমিটির সভাপতি অরুণ মণ্ডলের সংযোজন, ‘মোদিজি সবসময় বলেন, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস। আমরা সেটাই করে দেখাই।’