শুভদীপ শর্মা, লাটাগুড়ি: সারা বছর নানা কাজে ব্যস্ত থাকে তারা। নিয়ম মেনে কখনও পর্যটকদের জঙ্গলে সাফারি করাচ্ছে। আবার কখনও তাদের পিঠে চেপেই জঙ্গলের আনাচকানাচে টহল দেন বনকর্মীরা। তবে গত ক’দিনের তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হতেই গরুমারায় কুনকিদের (Elephants) ডিউটিতে কিছুটা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দপ্তর। দুপুরের দিকে তাপমাত্রা সবথেকে বেশি হওয়ায় ওই সময় কুনকিদের দিয়ে কোনও কাজ করানো হচ্ছে না। পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রায়ও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
প্রচণ্ড গরমে যাতে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) গরুমারা ও আলিপুরদুয়ারের জলদাপাড়ার কুনকিদের কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য তাদের ওপর বিশেষ নজর রেখেছে মাহুতরা। দিনের বেশিরভাগ সময় গরুমারার হাতিরাকাটাচ্ছে মূর্তি নদীতে। পরিবর্তন আনা হয়েছে খাদ্যাভ্যাসেও। চাল, ডাল, কলা পাতার পাশাপাশি হাতিদের শসা ও আখ দেওয়া হচ্ছে। গরুমারা সাউথ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার সুদীপ চক্রবর্তীর কথায়, ‘জঙ্গলে কুনকিদের দিয়ে একেবারে সকালে কিংবা বিকেলের পর নজরদারি চালানো হচ্ছে। পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বুনোদের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরও। পাশাপাশি একই কুনকিদের দিয়ে কাজ না করিয়ে পর্যায়ক্রমে সমস্ত কুনকিদের একে একে কাজে লাগানো হচ্ছে।’
অসহ্য গরমে (Summer) নাজেহাল গোটা উত্তরবঙ্গবাসী। গরমের প্রকোপ থেকে বাদ যায়নি গরুমারা ও জলদাপাড়ার কুনকিরাও। তাদের কিছুটা রেহাই দিতে কুনকিদের ডিউটিতে শিথিলতা আনা হয়েছে।
বর্তমানে গরুমারায় কুনকি হাতির সংখ্যা ২৭। তার মধ্যে চারটি শাবক রয়েছে। আর জলদাপাড়ায় সংখ্যাটা ৮৪। এদের প্রত্যেককেই জঙ্গলে নজরদারি, লোকালয়ে বেরিয়ে পড়া বন্যপ্রাণীদের ফেরত আনা এমনকি পর্যটকদের ঘোরানোর কাজে লাগানো হয়। তবে গত কয়েকদিনের তীব্র গরমে যাতে এই কুনকিরা অসুস্থ না হয়ে পড়ে তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। গরুমারার ও জলদাপাড়ায় গন্ডাররা সবসময়ই চোরাশিকারিদের নজরে থাকে। অতীতে এর জন্য প্রাণ হারিয়েছে একাধিক গন্ডার। এছাড়া, জঙ্গলে চোরাকারবারি রুখতেও কাজে লাগানো হয় কুনকিদের। দিনকয়েক আগেই নেপালে একটি হাতি মেরে তার দাঁত কেটে নিয়ে যায় চোরাকারবারিরা। তার জেরেই গরুমারা ও জলদাপাড়ায় হাই অ্যালার্ট রয়েছে। কুনকির পিঠে চেপেই জঙ্গলের আনাচকানাচে নজরদারি চালান বনকর্মীরা। তবে গত কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র গরমে গোটা উত্তরবঙ্গবাসীর পাশাপাশি কাহিল হয়ে পড়েছে এই কুনকিরাও। সেজন্য কুনকিদের কাজে কিছুটা ছাড় দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দপ্তর। এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণী বিভাগের বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘কুনকিরা বন দপ্তরের অন্যতম সম্পদ। তাদের সুস্থ রাখার জন্য সবরকমের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’