অভিরূপ দে ও বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: ঝড়ের তাণ্ডবে জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছে। তবুও প্রাণপণে দাঁতে দাঁত চেপে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা চলছে।
প্রশাসনের তরফে মাত্র এক টুকরো পলিথিন শিট মিলেছে। সেটাই কোনওমতে টাঙিয়ে ময়নাগুড়ি বার্নিশ কালীবাড়ির কায়েতপাড়ার বাসিন্দা কণিকা রায় দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সেটির নীচে ঠাঁই নিয়েছেন। কণিকার মতো বিপ্লব রায়, দীনেশ সরকার, রবি মণ্ডলের মতো অনেকেই ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে নতুনভাবে জীবন শুরুর চেষ্টা করছেন। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা জীবন বর্মন বললেন, ‘ঝড়ে এলাকার শিরদাঁড়াটাই যেন ভেঙে গিয়েছে। তবুও সবাই মিলে জোর চেষ্টা চলছে।’
দুর্গত এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে মঙ্গলবার নজরদারি চালানো হয়। প্রশাসনের তরফে ১২টি জায়গায় রান্না করে দুর্গতদের মধ্যে খাবার বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আড়াই হাজারেরও বেশি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক শামা পারভিন এদিন এলাকায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ঠিক করতে সমস্ত ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ রেডক্রস সোসাইটি, ময়নাগুড়ি লায়ন্স ক্লাব সেবা, ময়নাগুড়ি কলেজের এনএসএস বিভাগ, জলপাইগুড়ি জেলা ইউনাইটেড ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সহ অন্যান্য সংগঠন থেকে ত্রাণ বিলি করা হয়। পুটিঁমারি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার খাদ্যসামগ্রী প্যাক করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে এসবের পাশাপাশি থালাবাসন, স্টোভ, জামাকাপড় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডু জানিয়েছেন। প্রায় ৫০০ বিদ্যুৎকর্মী দিনরাত এক করে কাজ চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি বড় অংশে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করেছেন। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার উত্তরবঙ্গের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃগাঙ্কমৌলি দে বললেন, ‘অবশিষ্ট অংশেও খুব তাড়াতাড়ি পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।’
বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। বার্নিশ এলাকায় সাপের কামড়ে জখম দীনবালা রায়কে হাসপাতালে পাঠানো হয়। দিনভর গোটা এলাকা থেকে ১০টির বেশি সাপ উদ্ধার করা হয়। বার্নিশ সর্দারপাড়া এলাকার মনোজ রায় বললেন, ‘পানীয় জল, পর্যাপ্ত খাবারের অভাব রয়েছে।’ পুঁটিমারি এলাকার বাসিন্দা সুধীর রায় বললেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া খাবার একবেলা খেয়ে দু’দিন চলেছে।’ শৌচাগার ভেঙে যাওয়ায় অনেকে খোলা জায়গাতেই শৌচকর্ম সারছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে সংক্রামক বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। পরিস্রুত জল খাওয়া, শিশুদের জন্য বিশেষ যত্নের ব্যবস্থা করতে হবে বলে ডাঃ সপ্তর্ষি মণ্ডল, ডাঃ শিলাদিত্য মিশ্র পরামর্শ দিয়েছেন। ময়নাগুড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সীতেশ বর বলেন, ‘চারটি অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির করা হয়েছে। আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুড়ে মেডিকেল কিট বিলি শুরু করেছেন।’