সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: হৃদযন্ত্রটি বুকের ডানদিকে। শুধু তাই নয়, পেটের ভেতরের বাকি অঙ্গগুলোর স্থানও উলটোদিকে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই রয়েছে ধূপগুড়ির (Dhupguri) বাসিন্দা অনুপ মজুমদারের শরীরে। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ডেক্সট্রোকার্ডিয়া সিটাস ইনভার্সাস। বুধবার জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজে (Jalpaiguri Medical College and Hospital) অনুপবাবুর পায়ে একটা জটিল অস্ত্রোপচার হয়।
চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের রোগীর অস্ত্রোপচার করা অত্যন্ত জটিল। কেননা, অনুপবাবুর শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলো স্বাভাবিক মানুষের মতো যথাস্থানে নেই এবং তাঁর হৃদযন্ত্রে জন্ম থেকেই ফুটো থাকার কারণে অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তাই এই ধরনের রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য অজ্ঞান করাটাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক চিকিৎসকদের টিম এবং অ্যানাস্থেটিস্ট শংকর রায়ের দক্ষতায় এদিন অনুপ মজুমদারের পায়ের জটিল অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ কল্যাণ খান বলেন, ‘ডেক্সট্রোকার্ডিয়া রোগীদের অস্ত্রোপচার একটা জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু আমাদের চিকিৎসকরা এতে সফল হয়েছেন। এই চিকিৎসকরা আমাদের মেডিকেল কলেজের গর্ব।’
অনুপ মজুমদার পেশায় একজন গাড়ির চালক। মাসকয়েক আগে এক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি পায়ের হাড় বেশ কয়েকটি টুকরো হয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর তাঁকে প্রথমে উত্তরবঙ্গে মেডিকেল কলেজে (NBMCH) এবং পরে শিলিগুড়ির (Siliguri) একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করা হলেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেননি। সম্প্রতি জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজে বহির্বিভাগে অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ অনুপম সাহার কাছে এসেছিলেন তিনি। তখনই ডাঃ সাহা জানতে পারেন অনুপ ডেক্সট্রোকার্ডিয়া সিটাস ইনভার্সাসের রোগী। এ বিষয়ে অ্যানাস্থেটিস্ট শংকর রায় বলেন, ‘১০ হাজার জনের মধ্যে একজনের এমনটা দেখা যায়। পাশাপাশি রোগীর হৃদযন্ত্রে জন্ম থেকেই ফুটো থাকায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেকটাই কম ছিল। তাই রোগীকে অজ্ঞান করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। কিন্তু এদিন সফলভাবে অস্ত্রোপচারের পর রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।’