পূর্ণেন্দু সরকার ও সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri BJP) থেকে পুনরায় প্রার্থী হতে চলেছেন সম্ভবত ডাঃ জয়ন্ত রায় (Jayanta Roy)। রবিবার তারই ইঙ্গিত পাওয়া গেল বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর (Bapi Goswami) মন্তব্যে। এদিন সাংসদ জয়ন্ত রায় তাঁর বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নিজের পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। লিফলেটের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়। সেখানেই সাংসদের পাশে বসে বাপি গোস্বামী বলেন, ‘গতবার জয়ন্ত রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এবার আরও বেশি মার্জিনে জিতবেন।’ যদিও তাঁর দাবি, এই মতামত তাঁর ব্যক্তিগত। তবে জেলার পক্ষ থেকে জয়ন্ত রায়ের নামই প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। গত ৬ জানুয়ারি জলপাইগুড়িতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছিলেন, বিজেপির স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাংসদদের মধ্যে জয়ন্ত রায় অন্যতম। এই ধরনের ব্যক্তিত্বকেই দল পাশে চায়। জয়ন্ত রায় এদিন বলেন, ‘আমার কাজের বিচার ভোটাররাই করবেন। দল কাকে প্রার্থী করবে, সেটা দলের বিষয়।’
তবে এদিন সাংসদের প্রকাশ করা উন্নয়নের খতিয়ান নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সাংসদের প্রকাশ করা লিফলেটে জয়ন্তবাবু তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকায় কী কী কাজ করেছেন, তাঁর যৎসামান্য উল্লেখ থাকলেও কেন্দ্র সরকারের একাধিক কাজের ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, করোনাকালের দুই বছর বাদে তিনি সাংসদ তহবিলে পেয়েছেন ১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জন্য ৪০–৫০ লক্ষ টাকা তিনি খরচ করতে পারেননি। কিন্তু সরকারি হিসেব বলছে, ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে সাংসদ তহবিলে। বিরোধীদের দাবি, সাংসদ তহবিলের টাকায় যে সমস্ত কাজের খতিয়ান দিয়েছেন সাংসদ, তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে ১৭ কোটি টাকার কাজ হয়নি।
এদিন সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন জেলায় জেলায় মেডিকেল কলেজ। কিন্তু সেই তালিকায় জলপাইগুড়ির নাম ছিল না। আমি নিজে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের নাম প্রস্তাব করেছি। অন্যদিকে, অমৃত ভারত প্রকল্পে জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি রোড, নিউ মাল এবং হলদিবাড়ি স্টেশনের নাম আমি প্রস্তাব করেছিলাম। রেলমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দার্জিলিং মেলকে হলদিবাড়ি থেকে চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ কিন্তু তাঁর এই কৃতিত্বকে মান্যতা দিতে রাজি নয় বিরোধী শিবির। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, ‘সাংসদ তহবিলের টাকায় উনি কী কাজ করেছেন সেটাই তাঁর খতিয়ানে থাকা উচিত। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পকে খতিয়ানে তুলে ধরে তা নিজের বলে দাবি করে ভোটের আগে ভুল বার্তা দিয়ে ফায়দা তুলতে চাইছেন তিনি।’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, ‘উনি সাংসদ তহবিলের টাকা রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণে খরচ করতে পারছেন না তা পাঁচ বছরের মধ্যে তো কখনও বলেননি। ওঁকে কখনও দেখিনি এই অভিযোগ নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে। সদিচ্ছার অভাবে নিজে কাজ করতে না পেরে আজ কেন্দ্রের অমৃত ভারত প্রকল্প আর ফোর লেনের রাস্তার কাজকে নিজের কাজের খতিয়ানে তুলে ধরে ভোটের আগে চমক দিতে চাইছেন।’