বানারহাটঃ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলাকে (John Barla) এবার টিকিট দেয়নি বিজেপি। তাঁর জায়গায় আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে মনোজ টিগ্গাকে (Monaj Tigga) প্রার্থী করেছে দল। টিকিট না পেয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী। মঙ্গলবারই মনোজকে ভোট না দেওয়ার জন্য আদিবাসী সমাজের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ জন বারলার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য স্তরের নেতাদের একাংশ। এর পাশাপাশি তৃণমূলত্যাগী আদিবাসী নেতা রাজেশ লাকড়া ওরফে টাইগারের সঙ্গে বারলার হাত মেলানোর একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার দিল্লি থেকে ফিরে বানারহাটের চামুর্চি মোড়ে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে দুই দফায় বৈঠক করেন জন বারলা। মনোজ টিগ্গার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। এখনই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত না নিলেও অরাজনৈতিকভাবে আগের মতো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ও চা শ্রমিকদের স্বার্থে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন জন বারলা। এমনকি তৃণমূলত্যাগী আদিবাসী নেতা রাজেশ লাকড়া ওরফে টাইগারের সঙ্গে হাত মেলানোর কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। ওই বৈঠকে মাইক হাতে নিয়ে বারলা প্রকাশ্যে দাবি করেন, ‘আমি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আদিবাসীদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি। আমার হাত ধরেই চা বাগান এলাকায় বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পথচলা শুরু হয়। আমি একাই লড়াই করে বিজেপির সাতজন বিধায়ককে জিতিয়েছি। আমার নেতৃত্বেই পঞ্চায়েতে ২০০টিরও বেশি আসন পেয়েছে বিজেপি। মনোজ টিগ্গাও আমার জন্যই মাদারিহাট বিধানসভা থেকে জয়লাভ করেছেন। তরাই ডুয়ার্সে সংগঠন তৈরির ক্ষেত্রে অন্য বিজেপি নেতাদের কোনও অবদান নেই।’
এদিনের বৈঠকে সরাসরি দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা না বললেও পরোক্ষভাবে দলের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে দেখা যায় বারলাকে। তাঁর কথায়, ‘জন বারলা হল একটি ব্র্যান্ড। আমি যাকে আশীর্বাদ করব, সেই ভোটে জিতবে। মনোজ টিগ্গা চা বাগানে ঢুকলে কেউ তাঁকে মালা পরাবে না, উলটে জুতোর মালাই পরাবে।’ পাশাপাশি একপ্রকার হুমকির সুরেই তিনি বলেন, ‘কলকাতার কোনও নেতাই আমার সম্মতি ছাড়া চা বাগানে ঢুকে প্রচার চালাতে পারবেন না।’
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জন বারলাকে টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে বারলার অনুগামী বিজেপি নেতাদেরও। তাঁদেরও বারলার পাশে এসেই দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। বিজেপির শ্রমিক নেতা পারশনাথ বড়াইকের কথায়, ‘বিজেপি ঠিক করেনি। জন বারলা দীর্ঘদিন ধরে একাই সংগঠনের রাশ ধরে রেখেছেন। তৃণমূলের অত্যাচারে তাঁকে জেলেও যেতে হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির উচিত তাঁদের সিদ্ধান্ত বদল করে ফের জন বারলাকেই টিকিট দেওয়া।’ বিটিডব্লিউইউ নেতা সন্তোষ হাতি বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিকভাবে সবসময় জন বারলার সঙ্গেই রয়েছি। মনোজ টিগ্গার হয়ে আমরা প্রচারে নামব না।’
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের তরফে জন বারলার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইককে বারলার সমর্থনে বলতে শোনা গিয়েছে। সাংসদ প্রকাশ চিকবরাইকের কথায়, একজন রানিং মন্ত্রীর টিকিট কাটা পড়েছে দেখে আমরাও অবাক হয়েছি। জন বারলা উন্নয়নের কোন কাজ না করলেও এটা ঘটনা ওর নেতৃত্বেই চা শ্রমিক সংগঠন বিটিডব্লিইউ বাগানে ঘাঁটি গাড়তে পেরেছে। জন বারলার প্রতি এমন নমনীয় মনোভাবেই স্পষ্ট বারলাকে কাজে লাগিয়ে চা বাগিচা মহলে বিজেপির ভোট ব্যাংকে থাবা বসাতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল।