নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: প্রায় ৪ লাখ ভোটের অঙ্ক। জন বারলার (John Barla) হাতে থাকা এই ভোট আদৌ মনোজ টিগ্গা (Manoj Tigga) পাবেন কি না, তা অজানা। কারণ বারলা নিজেই জানাচ্ছেন, টিকিট না পাওয়ার জন্য তাঁর অনুগত এই ভোটাররা মনোজকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মনোজকে ঘুরিয়ে আবার হুমকি দিলেন বিদায়ি সাংসদ জন বারলা।
টিকিট না পেলেও বারলা অবশ্য বসে নেই। বাড়িতে বসেই নিজের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মিটিং করছেন। মনোজের হয়ে ময়দানে তিনি কবে নামবেন বা আদৌ নামবেন কি না, সেই প্রশ্ন করতেই ক্ষোভ উগরে দিলেন জন। বললেন, ‘টিকিট না পাওয়ায় আমার অনুগামীরা খেপে আছেন। আমি প্রচারে গেলে তাঁদের কী জবাব দেব। ওঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে আমি কোনও সিদ্ধান্ত জানাতে পারছি না। সেই সিদ্ধান্ত আমি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নেব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার বিষয় নিয়ে কী ভাবছে বা কী দায়িত্ব দেয়, আগে দেখব। এরপর আমার সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তারপর ভাবব ময়দানে ভোট (Lok Sabha Election 2024) প্রচারে নামব কি না।
চা বাগানে বারলার নিজস্ব শ্রমিক সংগঠন বিটিডব্লিউইউ রয়েছে। আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) লোকসভা কেন্দ্রে এই সংগঠনের অনুগত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। দলকে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি জানিয়েছেন, এই ভোটাররা শেষপর্যন্ত কাকে ভোট দেবেন, তিনি জানেন না।
গত ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় মঞ্চে হাজির ছিলেন বারলা। তার আগের দিন এক ভিডিওবার্তায় তিনি আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী (BJP Candidate) মনোজ টিগ্গাকে ভাই বলে সম্বোধন করেন। তবে, তাঁকে সরিয়ে মনোজকে টিকিট দেওয়ায় তিনি প্রথমে প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেলাগাম মন্তব্য করেছিলেন।
টিকিট না পাওয়ায় এদিনও মনোজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বারলা। তাঁর দাবি, ‘মনোজ আমাকে কথা দিয়েছিল মাদারিহাট স্টেশনে শিয়ালদাগামী কাঞ্চনকন্যা ট্রেনের স্টপ করে দিলে ৬০ হাজার ভোট আমার পক্ষে যাবেই। শেষে মনোজ কৌশলে নিজেই টিকিট নিয়ে নিল।’
জনের ক্ষোভ, ‘বিজেপির পুরোনো সাংসদরা প্রায় সবাই টিকিট পেয়ে গেলেন। চা বাগানগুলিতে আমার নিজস্ব সংগঠন রয়েছে, যা অন্য কোনও সাংসদ বা বিধায়কের নেই। যাঁদের নিজস্ব কোনও সংগঠন নেই তাঁদের সবাই টিকিট পেলেন। আর আমার নিজের সংগঠন থাকা সত্ত্বেও আমি টিকিট পেলাম না।’ এরপরই জনের হুমকি, ‘আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে যতগুলি চা বাগান রয়েছে তার প্রত্যেকটিতে আমার সংগঠন রয়েছে। সব মিলে আমার সংগঠনের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। আমার প্রতি যে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁরা এখনও কেউ সেটা মেনে নিতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘৭ জন বিধায়ক রয়েছেন, যাঁরা চা বাগানের জন্য কোনও কাজ করেননি। আমি ২০০৫ সাল থেকে মাটি কামড়ে শ্রমিকদের জন্য কাজ করে চলেছি। তখন বিজেপির ঝান্ডা লাগানোর কেউ ছিল না। আমি লাগিয়েছি। ২০১৩ সালে ২০৮ জন পঞ্চায়েত সদস্য আমার নেতৃত্বে জিতেছেন।’
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, জন অপেক্ষায় আছেন তাঁকে বড় কোনও পদ দেওয়া হয় কি না। সেইজন্য জল মেপে চলছেন তিনি।
যদিও মনোজ বলেছেন, ‘জনদা আমার অভিভাবকের মতো। তিনি আমার হয়ে প্রচারে শেষপর্যন্ত নামবেন, এটা জনদার প্রতি আমার দৃঢ়বিশ্বাস।’
তবে, চা বাগানগুলিতে মনোজের হয়ে এখনও সেইভাবে প্রচারে নামতে দেখা যায়নি চা শ্রমিক নেতাদের। তা বিজেপির কপালে ভাঁজ ফেলার জন্য যথেষ্ট।