নাগরাকাটা: চা বাগানের ডাবলি (এক্সট্রা লিফ প্রাইস), এলটিএ( লিভ ট্রাভেল অ্যালাউন্স) ও পে অফ পোস্ট নিয়ে আগামী ৩১ জুলাই বৈঠক ডাকল মালিকদের যৌথ মঞ্চ কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশন (সিসিপিএ)। শিলিগুড়ির দাগাপুরের শ্রমিক ভবনের কনফারেন্স হলে ওই দ্বিপাক্ষিক স্তরের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। সিসিপিএ-র আহ্বায়ক অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, এর আগে গত ২৮ জুন অন লাইনে ডাবলি-এলটিএ নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে শ্রমিক প্রতিনিধিরা সশরীরের বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছিল। সেই মোতাবেক ৩১ জুলাই বৈঠকটি হবে। আশা করছি চা শিল্পের দস্তুর মেনে এই বৈঠকের আলোচনাও সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে হবে।
এদিকে দ্রুত ডাবলি ও এলটিএ চুক্তি সম্পাদনের দাবিতে সরব হয়েছে সব কটি শ্রমিক সংগঠনই। তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান নকুল সোনার বলেন, এর আগে ৫ টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোন সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসে নি। ইতিমধ্যেই বহু সময় পেরিয়ে গেছে। ৩১ জুলাইয়ের বৈঠকেই যাতে সমাধানসূত্র তৈরি করে ফেলা হয় মালিকপক্ষকে সেকথা জানানো হয়েছে। বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় টি ওয়াকার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জন বারলা বলেন, ডাবলির পরিমান বাড়িয়ে অন্তত কিলো প্রতি ১৫ টাকা ও সন্তোষজনক হারে এলটিএ-র পরিমান করার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। বৈঠকের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি। নয়তো আন্দোলন শুরু হবে। চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম শীর্ষ নেতা মণি কুমার দার্নাল বলেন, দীর্ঘদিন পর সশরীরের একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে। চ়ুড়ান্ত নিষ্পত্তি নিয়ে আমরা দারুনভাবে আশাবাদী। স্টাফ-সাব স্টাফ জয়েন্ট কমিটির আহ্বায়ক আশিষ বসু বলেন, ৩১ জুলাইয়ের বৈঠকের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছি।
বাগান পিছু ধার্য নির্দিষ্ট পরিমানের বেশী কাঁচা পাতা তুললে কিলো প্রতি অতিরিক্ত হিসেবে শ্রমিকদের যা মেলে সেটাই ডাবলি হিসেবে পরিচিত। চা শ্রমিক সংগঠনগুলি জানাচ্ছে ডাবলি নিয়ে শেষ চুক্তিটি সম্পাদিত হয় ২০১৫-র ২০ মে। এরপর ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন করে ডাবলির হারের পুনর্মূল্যায়ন করা হয় নি। বর্তমানে ডুয়ার্স-তরাইয়ের বাগানে ওই পরিমান নির্দিষ্ট টাস্কের চেয়ে ৬ কিলো পর্যন্ত বেশী তুলতে ৩ টাকা এবং টাস্কের অতিরিক্ত কাঁচা পাতার পরিমান ৬ কিলোর বেশী হলে তা সাড়ে ৩ টাকা করে। পাহাড়ের বাগানের ক্ষেত্রে ডাবলির হার আলাদা। ডুয়ার্স তরাইয়ে বাগান ভেদে টাক্সের পরিমানও ভিন্ন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোথাও তা দিনে ২৪ কিলোগ্রাম আবার কোথাও ২৫ কিলোগ্রাম। আবার টাস্কের কম পরিমান কাঁচা পাতা তুললে মজুরি থেকে টাকা কেটে নেওয়ার চলও প্রচলিত আছে। সেটা উঠিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি শ্রমিকদের রয়েছে।
চা বাগানে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মরত শ্রমিকদের পাশাপাশি ৩ ক্যাটিগোরির কর্মচারীও রয়েছে। তাঁরা যথাক্রমে স্টাফ, সাব স্টাফ ও টেকনিসিয়ান সি হিসেবে পরিচিত। স্টাফ বা বাগান বাবু ও টেকনিসিয়ান সি ক্যাটিগোরির গাড়ি চালক, ফ্যাক্টরি ইঞ্জিন চালক, ইলেকট্রিসিয়ানদের পুরনো এলটিএ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা এখনো নতুন করে সম্পাদিত হয় নি। ২০২১ এর ১০ অগাস্ট সম্পাদিত চুক্তিটি ছিল ২০১৮-২০২০ সালের জন্য। অন্যদিকে বৈদার, সর্দার, চৌকিদার এরকম নানা পদে কর্মরত সাব স্টাফদের ৪ বছরের জন্য সম্পাদিত এলটিএ-র পুরনো চুক্তির মেয়াদও সম্প্রতি ফুরিয়ে গেছে। স্টাফদের এলটিএ-র ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি ২৫,০০০ টাকা। পুরোনো চুক্তি অনুযায়ী শেষ বারের জন্য তাঁরা ওই বাবদ পেয়েছিলেন বিবাহিতদের ক্ষেত্রে ১৫,৩০০ টাকা ও অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে ৭৬৫০ টাকা। ২০২১ এর ৫ মে সম্পাদিত সাব স্টাফদের সর্বশেষ এলটিএ চুক্তি অনুযায়ী তাঁরা ২০১৮-২০২১ এই ৪ বছরের জন্য পেয়েছিলেন যথাক্রমে ৩০০০, ৩১৫০, ৩৩৫০ ও ৩৪৫০ টাকা। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি ওই পরিমাণ ৭ হাজার টাকা করা হোক।
অন্যদিকে বাগানে কীটনাশক স্প্রে, ফ্যাক্টরি সহ আরো কয়েকটি ক্ষেত্রে যে শ্রমিকরা কাজ করেন তাঁদের মজুরির হার কিছুটা বেশি। ওই ধরনের শ্রমিকরা পে অফ পোস্টের শ্রমিক হিসেবে পরিচিত। ওই মজুরির হারের পুনর্নবীকরণ করার বিষয়টিও ৩১ জুলাইয়ের বৈঠকে আলোচনা হবে।