জলপাইগুড়ি: অবৈধ নার্সিং প্রশিক্ষণ সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াতেই প্রশাসনের দারস্থ হলেন পদ্মশ্রী করিমুল হক। বৃহস্পতিবার তিনি ওই সংস্থার মালিক শান্তনু শর্মার বিরুদ্ধে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কোতোয়ালি থানার আইসির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এই সংস্থার যে বৈধতা নেই আগে জানতেন না। শান্তনুর কথায় বিশ্বাস করে নিজের বাড়িতে এই নার্সিং প্রশিক্ষণ সংস্থা খোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। শান্তনুর পালটা অভিযোগ, করিমুল হকের বাড়ির সেন্টার থেকে পড়ুয়া প্রতি যে আয় হত অর্ধেক তাঁর ছেলে নিতেন। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার বলেন, ‘করিমুল অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
জলপাইগুড়িতে এসে করিমুল হক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘যখন সেন্টারটি আমার মানব সেবাসদনের দোতলায় চালু হয়, সেই সময় আমি ওঁর নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের অনুমোদনের কী প্রমাণ রয়েছে তা দেখানোর কথা বলি। কিন্তু আমাকে কোনও কাগজ দেখাননি। আমি চেয়েছিলাম যাতে গ্রামের ছেলেমেয়েরা এই নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হয়। কিন্তু সেন্টারের যে বৈধতা নেই তা আমার জানা ছিল না। এখন যা দেখছি আমিও ওঁর কথা বিশ্বস করে প্রতারণার শিকার হয়ে গেলাম। শান্তনুর জন্য আজ আমার সম্মান নষ্ট হল। যে কারণে আজ আমি বাধ্য হলাম বিষয়টি পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের নজরে এনে শান্তনু শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে।’
যদিও করিমুলের এই অভিযোগ মানতে নারাজ শান্তনু। তিনি বলেন, ‘সব কিছু জেনেই ওঁর বাড়িতে সেন্টার খুলতে রাজি হয়েছেন। উনি যদি আজ বলে থাকেন লেখাপড়া বেশি জানেন না তাহলে সেন্টার শুরু করার আগে কারও মাধ্যমে কেন বিস্তারিত খোঁজখবর নেননি। আর ওঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে আমি ওখানে সেন্টার খুলেছি। ছাত্রছাত্রীদের থেকে কোর্স ফি বাবদ যে টাকা নেওয়া হত তার অর্ধেক করিমুল হকের ছেলে রেখে বাকি টাকা আমাদের পাঠাতেন।’
জলপাইগুড়ি শহরের পান্ডাপাড়া এলাকায় গত আট বছর ধরে এই বেসরকারি সংস্থা নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের প্রাক্তন ছাত্রীদের একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই সংস্থার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সংস্থার মালিককে স্বাস্থ্য দপ্তরে ডেকে পাঠিয়ে সেন্টার বন্ধ রাখার মুচলেকা নেওয়া হয়।
সংস্থার অপর একটি সেন্টার গত কয়েক মাস ধরে চলছিল ক্রান্তি ব্লকের বাসিন্দা করিমুল হকের বাড়িতে। পান্ডাপাড়ার অবৈধ সংস্থা বন্ধের খবর জানাজানি হতেই তিনি নিজের বাড়িতে থাকা সেন্টারটির বোর্ড খুলে ফেলেন। তবে তিনি যে শুধু নিজের বাড়িতে সেন্টার খোলার অনুমতি দিয়েছিলেন, এমনটা নয়। নার্সিং ট্রেনিং সংস্থার হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গুণগান গেয়েছেন। সংস্থাটি করিমুলকে ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডর বানিয়েছিল। যদিও করিমুলের দাবি, সবই নাকি হয়েছে তাঁর অজান্তেই। আইসি অর্ঘ্য সরকার বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর যদি অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে মামলা রুজু করা হবে।’