রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: বহু অভিযোগ, বহু চিঠিচাপাটির পরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। বেআইনিভাবে জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। খড়িবাড়ি ব্লকের পানিট্যাঙ্কির জমি কেলেঙ্কারি (Land scam) নিয়ে এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) হস্তক্ষেপ চাইছেন খোদ মহকুমা পরিষদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষ। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতিও।
তাঁর অভিযোগ, ‘সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পেয়েও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করছে না। বহুবার এই নিয়ে জেলা থেকে ব্লক স্তরে বলেছি। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই সমস্ত নথি সহ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকেই চিঠি দিচ্ছি।’
শুধু পানিট্যাঙ্কির (Panitanki) জমি কেলেঙ্কারি নয়, আইএনটিটিইউসি নেতার তোলাবাজি, মাদকের কারবার থেকে তোলাবাজি নিয়েও অভিযোগ যাচ্ছে। দার্জিলিংয়ের জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রামকুমার তামাং বলেছেন, ‘ওই রিপোর্টগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
খড়িবাড়ির ভারত-নেপাল সীমান্তে পানিট্যাঙ্কিতে চা বাগানের লিজে থাকা সরকারি জমি দখল করে বিশাল মার্কেট কমপ্লেক্স হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ সংবাদে ধারাবাহিকভাবে এই কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হওয়ার পরে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ করে। ওই জমি চা বাগানের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে দখলকারী ব্যবসায়ী সংগঠন মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে লিজ দেওয়া হয়। মোট ৭.৯২ একর জমি ওই ব্যবসায়ী সমিতিকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে, লিজ নেওয়া জমির বাইরেও অতিরিক্ত প্রায় ১৪ বিঘা জমি দখল করে মার্কেটের জন্য বিক্রি করা হয়েছে।
মহকুমা পরিষদে তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরে ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নিয়ে আধুনিক মেশিন দিয়ে ওই জমি জরিপের ব্যবস্থা করে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। পরবর্তীতে যে রিপোর্ট দেওয়া হয় সেখানে জমি দখলের সত্যতার প্রমাণ মেলে। এরপরেই মহকুমা পরিষদ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ না হওয়ায় গত মাসে ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আবার বিষয়টি নিয়ে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বস্তরে চিঠি দেন। কেন এখনও পদক্ষেপ হল না, তিনি সেই প্রশ্নও তোলেন।
কিন্তু তার পরেও কোনও দপ্তরেরই উচ্চবাচ্য নেই বলে খোদ ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কিশোরীমোহন সিংহের অভিযোগ। আর তাই এবার এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সমস্ত নথিপত্র সহ মুখ্যমন্ত্রীকেই সরাসরি চিঠি দিচ্ছেন। দু’-তিনদিনের মধ্যেই চিঠি নবান্নে পৌঁছে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শুধু জমি কেলেঙ্কারি নয়, এই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বর্তমানে দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির ব্লক সভাপতি পদে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে টোটো সিন্ডিকেট খুলে তোলাবাজির অভিযোগ যাচ্ছে। এমনকি এই ব্লকে যেভাবে ড্রাগস কারবারিদের থেকে তোলাবাজি হচ্ছে সেটাও জানানো হবে।