আলিপুরদুয়ার: সরকারি আধিকারিকদের কি আঠারো মাসে বছর? এই প্রশ্নই এখন উঠছে আলিপুরদুয়ারে। শহরের সুরক্ষার জন্য যে বাঁধ বানানো হয়েছিল, সেই বাঁধের দখলদারির বিরুদ্ধে কোনও সরকারি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। যদিও সেই দখলদারি নিয়ে কিন্তু বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। তবে সরকারি কর্তারা সক্রিয় না হলেও দখলদাররা কিন্তু ভারী তৎপর। তদন্তের কাজে গতি নেই তো কী হয়েছে? এদিকে, রাতের অন্ধকারে বাঁধের ধারের গাছ কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।
শহরের কালজানি ও ডিমা নদীর সংযোগস্থলের কাছে যে বাঁধ রয়েছে, তার ধারে রাতারাতি কংক্রিটের পিলার বসিয়ে ঘরবাড়ি বানানো শুরু হয়েছিল। তা নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল উত্তরবঙ্গ সংবাদে। তারপরেও নির্বিকার প্রশাসন থেকে পুরসভা। ফলে সেচ দপ্তরের তদন্তকারী আধিকারিক থেকে পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেচ দপ্তরের নির্বাহী বাস্তুকার অমরেশকুমার সিং বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’ আর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ করও মুখে কড়া কথাই বলছেন, ‘বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করা হবে না। শীঘ্রই এব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।’
আলিপুরদুয়ার শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কালজানি নদী ও ডিমা নদীর সংযোগস্থলের কাছে সেচ দপ্তরের বাঁধের ধারে ঝোপঝাড় ছিল। বর্ষাকালে ফুঁসতে থাকা নদীর জল এসে সেই ঝোপজঙ্গলে এসে ধাক্কা খেলেও বাঁধের ক্ষতি হত না। কয়েক সপ্তাহ আগে সেই ঝোপজঙ্গল কেটে ফেলে নদীর স্পার এলাকা পর্যন্ত মাটি কেটে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে একাধিক কংক্রিটের খুঁটি পোঁতা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে শোরগোল পড়ে গেলে সাময়িকভাবে কিছুটা দমে যায় দখলদাররা। ফের সক্রিয় হয়েছে তারা। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কাঠের পাটাতন বসিয়ে একটি ঘর তৈরির তৎপরতা শুরু হয়েছে। এতেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বছরখানেক আগে ঘাগড়া এলাকায় বাঁশের ও কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে বাঁধের ধার দখলদারি শুরু হয়েছিল। যদিও সেই সময় দখলদারি ঠেকাতে পোঁতা খুঁটি উপড়ে দিয়েছিলেন সেচ দপ্তরের কর্মীরা। এবারে শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে একই কায়দায় দখলদারি শুরু হলেও প্রশাসনের এবারের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাঁধের ধারে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি গড়ে তোলার ফলে বর্ষাকালে নদীর খাত সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। সেচ দপ্তরের প্রাক্তন কর্মীরা জানিয়েছেন, বাঁধের ধারে বেআইনিভাবে ঘরবাড়ি হওয়ায় বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা নদী যে কোনও জায়গায় বাঁধ ভেঙে ফেলতে পারে। তখন কিন্তু শহরে জল ঢুকতে পারে। তাই এই ধরনের দখলদারির জেরে শহরের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আলিপুরদুয়ার পুরসভার কংগ্রেসের কাউন্সিলার শান্তনু দেবনাথের প্রশ্ন, ‘যেখানে সারা শহরের মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে, সেখানে কীভাবে জবরদখলদাররা বাঁধের ক্ষতি করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে? সবকিছু দেখেও প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে কেন?’ তাঁর মন্তব্য, ‘প্রভাবশালীদের হাত মাথায় না থাকলে এভাবে দখলদারি চলতে পারে না। আমি চেয়ারম্যানকে বলব, শীঘ্রই পদক্ষেপ করতে।’