বীরপাড়াঃ যেখানে চিতাবাঘের ভয়, সেখানে তো সকাল-সন্ধ্যাও হয়। শরীর সুস্থ রাখতে প্রাতর্ভ্রমণ কিংবা সান্ধ্যভ্রমণ আবশ্যিক বটে। বীরপাড়াবাসীর কাছে আবার বিকল্প জায়গার অভাব। ইউরোপিয়ান ক্লাবের মাঠজুড়ে গর্ত, আবর্জনায় ভরে গিয়েছে চারপাশ। হাইওয়ে ধরে হাঁটতে বেরোলে কখন যে ট্রাক পিষে দেয়, ভয়ে থাকতে হয় সবসময়। তাই সকাল-সন্ধ্যা চা বাগানে হাঁটতে বের হন স্থানীয়রা।
এদিকে, বীরপাড়া চা বাগানে এখন চিতাবাঘের ‘রাজত্ব’। আত্মরক্ষার স্বার্থে তাই হাতিয়ার লাঠি। তবে একে হাতিয়ার করে বুনোর আক্রমণ রোখা যাবে কি না, প্রশ্ন রয়েছে। চা বাগানে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ, বলছে বন দপ্তরও। বীরপাড়ার জয়ব্রত ভট্টাচার্য, নিরঞ্জন পাল, সুজিত বিশ্বাস, জনার্দন পাল, চন্দন দে’রা রোজ সান্ধ্যভ্রমণে বীরপাড়া চা বাগানে যান। এঁরা সবাই প্রৌঢ়। বীরপাড়া-ফালাকাটা রোড ধরে ফ্যাক্টরি লাইন হয়ে চা বাগানের ভেতর দিয়ে দল ধরে চলে যান বিরবিটি নদীর তীরে। ফেরেন পাশা লাইনের ভেতর দিয়ে। এলাকায় চিতাবাঘ রয়েছে বলে জানিয়েছে বন দপ্তর। ফ্যাক্টরি লাইনের রবিনসন কুজুরও বললেন, ‘সন্ধ্যার পর প্রায়ই তাদের দেখা যায় এলাকায়।’ জয়ব্রত অবশ্য জানিয়েছেন, সূর্যাস্তের আগেই তাঁরা ফিরে আসছেন। লাঠি হাতে পাঁচ-সাতজন একসঙ্গে থাকলে সম্ভবত চিতাবাঘ সামনে আসবে না। কিছুটা ঝুঁকি যে থাকে, সেটা অস্বীকার করছেন না তিনি।
বীরপাড়ার সমীর পাল বীরপাড়া হাইস্কুলের মাঠে প্রাতর্ভ্রমণ করেন। ক’দিন আগে স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য মাঠে প্রাতর্ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেদিন নাংডালা চা বাগানে গিয়েছিলেন সমীর সহ আরও কয়েকজন। সঙ্গে লাঠি ছিল। সমীরের কথায়, ‘লাঠি দিয়ে বুনোর আক্রমণ ঠেকানো যাবে কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে মনে সাহস জোগাতেই সেটা হাতে রেখেছিলাম।’
এ ব্যাপারে বন দপ্তরের দলগাঁওয়ের রেঞ্জ অফিসার ধনঞ্জয় রায়ের পরামর্শ, অত্যন্ত জরুরি দরকার ছাড়া চা বাগানে না ঢোকা ভালো। বিশেষ করে বিকেলের পর তো নয়ই। কারণ, সন্ধ্যা নাগাদ চিতাবাঘের আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে লাগাতার প্রচারাভিযান চলছে। তিনি বললেন, ‘আইন করে তো আর চা বাগানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তায় তাঁদের সচেতন হওয়া উচিত।’
প্রসঙ্গত, ১০ জানুয়ারি বীরপাড়া চা বাগানের ফ্যাক্টরি লাইনের উলটোদিকে ১৪ নম্বর সেকশনে এক নাবালিকার চিতাবাঘের খুবলে খাওয়া দেহ উদ্ধার হয়। ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাগানে শৌচকর্ম করতে গিয়ে বীরপাড়া চা বাগান লাগোয়া দলগাঁও চা বাগানের বাসিন্দা রাইলো মিঞ্জ বুনোর আক্রমণে প্রাণ হারান।