সমীর দাস, কালচিনি: ভোটের আগে প্রচারে বেরিয়ে আতান্তরে পড়তে চান না প্রার্থীরা। পাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, তাই ‘বিপজ্জনক’ জায়গা কৌশলে এড়িয়ে চলেন, এমন উদাহরণ রয়েছে। আলিপুরদুয়ারের চা বলয়ে প্রচার চালাতে গেলে প্রার্থীদের কাছে বন্ধ চা বাগানের থেকে বেশি বিপজ্জনক জায়গা আর কী রয়েছে? সেকথা নেতারা বিলক্ষণ জানেন। আর তাই চা বাগান অধ্যুষিত ব্লকগুলিতে বারবার প্রচারে এলেও বন্ধ বাগানমুখী হতে চাইছেন না প্রকাশ-মনোজ।
তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিকবড়াইক তাও একটা বন্ধ বাগানে অন্তত গিয়েছেন। কালচিনিতে না হলেও প্রতিবেশী মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের বন্ধ লঙ্কাপাড়া চা বাগানে প্রচারে গিয়েছিলেন প্রকাশ। তবে কালচিনি বা মাদারিহাট-বীরপাড়ার কোনও বন্ধ বাগানেই বিজেপির প্রার্থী মনোজ টিগ্গাকে দেখা যায়নি এখনও।
কেন যাননি? দু’দলের নেতারাই বলছেন, প্রার্থীদের ব্যস্ত শিডিউল। দিনভর চরকিপাক খাচ্ছেন। তাঁরা যাবেন ঠিকই। বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সাধারণ সম্পাদক কবিতা কেরকেট্টা বলেন, ‘খুব শীঘ্রই কালচিনি ও রায়মাটাং চা বাগানে প্রচারে আসবেন দলীয় প্রার্থী।’
কালচিনি চা বাগানের বুক চিরে চলে গিয়েছে রাঙ্গামাটি রোড। ওই রাজ্য সড়কের ওপর দিয়ে পাশের কয়েকটি চা বাগানে প্রচারে গেলেও বন্ধ কালচিনি আর রায়মাটাং চা বাগান দুটিকে কার্যত এড়িয়েই এদিন প্রচার সেরেছেন মনোজ। তা বলে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া কি এড়াতে পারলেন? উঁহু। মেচপাড়া চা বাগানের শ্রমিকদের তোলা প্রশ্নে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়তে হল তাঁকে। শ্রমিকদের একাংশ মনোজের সামনেই ক্ষোভের সুরে বলেই দিলেন, ভোটের আগে তো অনেকেই গাড়ি চেপে প্রচারে আসেন। ভোট পার হলেই আর কোনও নেতার দেখাই মেলে না।
বিজেপি প্রার্থীর মতো বন্ধ বাগান অনেকটাই এড়িয়ে চলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধেও। প্রকাশ নিজে দু’বার কালচিনিতে এসেছেন। ভাতখাওয়া, মধু চা বাগানে প্রচার চালালেও কালচিনি, রায়মাটাং চা বাগানে যাননি এখনও পর্যন্ত। তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সচিব ওমদাস লোহরা জানিয়েছেন, ব্যস্ত প্রচার শিডিউলের জন্য প্রার্থী এখনও অনেক বাগানেই যেতে পারেননি।
এদিন বেলা ১২টা নাগাদ রাঙ্গামাটি রোডের দলীয় কার্যালয়ে আসেন মনোজ। সেখান থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোজ সরাসরি চলে যান মেচপাড়া চা বাগানে। সেখানে শ্রমিকরা তখন চা পাতা তুলছিলেন। মাটিতে বসে শ্রমিকদের কাছে ভোটের আবেদন জানান মনোজ। আরও কিছুটা এগিয়ে যেতেই সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের ফিরিস্তি দিতে শুরু করেন মনোজ। ঠিক তখনই সুশীলা ওরাওঁ নামের এক শ্রমিক জানতে চান, ‘ভোটের পর আপনাদের দেখা মেলে না কেন?’
বন্ধ কালচিনি বাগানের শ্রমিক ভিনসারি ওরাওঁ, পায়রো ওরাওঁরা এখন ঠিকাশ্রমিকের কাজ করছেন মেচপাড়া বাগানেই। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা কতটা সমস্যায় রয়েছেন সেসব তো দেখতে কেউ আসছেন না। কার ওপর ভরসা করব?