রণজিৎ ঘোষ, দার্জিলিং: ভোটে (Lok Sabha Election 2024) লড়ছেন তৃণমূলের (TMC) প্রতীকে। কিন্তু মনোনয়নপত্র পেশ কর্মসূচিতে কোথাও দলের কোনও ঝান্ডা নেই। বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ে গোপাল লামার (Gopal Lama) জনসভা এবং র্যালিতে এমনই ছবি দেখা গেল। শুধু তাই নয়, র্যালিতে তৃণমূল কংগ্রেস এবং জোটসঙ্গী অনীত থাপার (Anit Thapa) ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার (বিজিপিএম) নেতৃত্ব দূরত্ব বজায় রেখেই হাঁটলেন। গোটা কর্মসূচিতে অনীতের জয়গান হজম করতে হল তৃণমূলকে। মাইকে টানা বাজল অনীতকে নিয়ে থিমসং। চারদিকে তাঁরই নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন জনতা। জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে বারবার হাততালি কুড়িয়েছেন অনীত। মঞ্চে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেসবই শুনলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষরা।
পরিস্থিতি বুঝে অনেকেই র্যালিতে হাঁটার বদলে ম্যালের জনসভায় বিজিপিএমের দাপট দেখে সেখান থেকে বাড়ির পথ নিয়েছেন। পাপিয়া অবশ্য বলেছেন, ‘এবার দার্জিলিং জয়ের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। ঝান্ডা না থাকলেও দলের প্রচুর নেতা-কর্মী এদিনের কর্মসূিচতে ছিলেন।’ অনীত মুখে একবারের জন্য তৃণমূলের নাম নেননি। তিনি বলেছেন, ‘উন্নয়নই একমাত্র ইস্যু। একে সামনে রেখেই জোড়াফুল চিহ্নে ভোট চাইছি। এবার আমাদের জয় নিশ্চিত।’
বৃহস্পতিবার থেকেই দার্জিলিং আসনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথমদিনই মনোনয়নপত্র জমা দেন তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা। এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য বুধবারই তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব, শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব সহ পুরনিগমের তৃণমূলের প্রায় সমস্ত কাউন্সিলার দার্জিলিং পৌঁছে গিয়েছিলেন। এদিন সকালে মহাকাল বাবার মন্দিরে পুজো দেন তৃণমূল প্রার্থী। সেখানে অনীত, পাপিয়া সহ অন্যরা ছিলেন। ম্যাল থেকে র্যালি করে মনোনয়নপত্র পেশ হবে এমন ঘোষণা আগেই হয়েছিল। সেই মতো হাতে দলীয় ঝান্ডা নিয়ে সকাল থেকেই ম্যালে ভিড় করেন বিজিপিএমের নেতা-কর্মীরা। ম্যালের চারদিকে বসানো মাইকে অনীতকে নিয়ে তৈরি থিমসং বাজতে থাকে। ধীরে ধীরে হোটেল থেকে বেরিয়ে ম্যালে পা বাড়ান তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু বিজিপিএমের ঝান্ডা এবং সেই দলের নেতা-নেত্রীদের দাপট এতটাই ছিল যে তৃণমূলের লোকজনকে সেভাবে চোখেই পড়েনি।
র্যালি বেরোনোর আগে ম্যালের মুক্তমঞ্চে সভা হয়। সেই মঞ্চে শিলিগুড়ির নেতৃত্বকে জায়গা দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, তবে মঞ্চের রাশ পুরোপুরি বিজিপিএমের দখলে ছিল। অনীত ভাষণে বলেন, ‘এবারের লড়াই হচ্ছে উন্নয়নের লড়াই। বিজেপি ১৫ বছর ধরে মিথ্যা কথা বলে ভোট নিয়েছে। এই বিজেপিকে আর একটিও ভোট আমরা দেব না।’ প্রার্থী গোপাল লামাও উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান।
জনসভা শেষে ম্যাল থেকে র্যালি শুরু হয়। র্যালির শুরুর দিকে গৌতম এবং পাপিয়া প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন। অনেকটাই পিছনের দিকে ছিলেন অনীত থাপা এবং তাঁর দলের নেতা-নেত্রীরা। তবে, গোটা মিছিলই ঢাকা পড়েছিল বিজিপিএমের হাজার হাজার ঝান্ডায়। দলের এক নেতা বলেই ফেললেন, ‘পাহাড়ের মানুষ তৃণমূলের ঝান্ডা দেখলে ভোট দেবেন? এটাই আমাদের স্ট্র্যাটেজি।’