তুষার দেব, দেওয়ানহাট, ২৪ মার্চ : বাজারে কিছু কেনাকাটা ছিল। কিন্তু ভোটের ভরা মরশুমে টিভিতে খবর শোনার তাড়াও ছিল। তাই পাড়ার মোড়ে দেরি না করে সন্ধ্যায় প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে সোজা কোচবিহারের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িতে ফিরলেন বিষ্ণুপদ পাল। এদিকে পালগিন্নি তখন টিভির সামনে জাঁকিয়ে বসে প্রিয় সিরিয়াল দেখছেন। স্বামী রিমোট হাতে নিতেই কার্যত ঝাঁঝিয়ে উঠলেন তিনি। এদিন কোনও এক বিশেষ ধারাবাহিকের মহাপর্ব। তাই সেই বিশেষ পর্ব মিস করতে রাজি নন পালগিন্নি। এদিন কি টিভির দখল ছাড়লে চলে? কিন্তু বিষ্ণুপদবাবুও ছাড়ার মানুষ নন।
এরমধ্যেই তাঁদের ছেলে বিশ্বজ্যোতি টিউশন থেকে হাজির। রবিবার আইপিএলের দুটো ম্যাচ যে তাকে দেখতেই হবে। কিন্তু একটিমাত্র টিভি একইসময়ে তিনজনের চাহিদা পূরণ করে কী করে? স্বভাবতই পাল বাড়িতে তৈরি হল গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। ভোট, আইপিএল আর টিভি সিরিয়াল ঘিরে যা এখন বেশিরভাগ বাড়ির কমন ছবি।
বাঙালি বরাবর রাজনীতি সচেতন। আর ভোটের সময় তো তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কে কোথায় প্রার্থী হলেন? প্রচারে এগিয়ে কোন দল? কী বলছেন প্রার্থীরা? তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে সেসব জানতে তাঁরা খবরের কাগজ, চ্যানেলে লাগাতার নজর রাখছেন। কোচবিহার-১ ব্লকের ঘুঘুমারি এলাকার আশিস সরকারও এর ব্যতিক্রমী নন। কিন্তু এবারে তিনি টিভিতে লোকসভা ভোটের খবর শুনবেন কী করে? ক্রিকেট পাগল ছেলে ইতিমধ্যে বাড়িতে বলে দিয়েছে, ‘২৬ মে আইপিএলের ফাইনাল পর্যন্ত টিভিতে অন্যকিছু চলবে না।’
এদিকে স্ত্রী তো কাজকর্মের ফাঁকে বারো মাস সিরিয়াল নিয়েই থাকেন। তাই আগামী প্রায় দু’মাস ভোটের টাটকা খবর নিতে স্ত্রী, পুত্রের সঙ্গে ‘অম্লমধুর’ ঝগড়ায় জড়াতে হবে আশিসকে। তাঁর কথায়, ‘প্রার্থীরা লোকসভা কেন্দ্র দখলে ঝাঁপাচ্ছেন। আর আমরা টিভি দখলে। ভোটযুদ্ধের চেয়ে এ যুদ্ধও যে কম নয়।’ তবে এতে হিংসা, কুকথা, হুমকি, হুঁশিয়ারির কোনও জায়গা নেই বলে জানান তিনি।
এই সময়ের প্রায় সকলের হাতেই তো স্মার্টফোন। তাতে আইপিএলের ম্যাচ দেখলে টিভির ওপর চাপ কিছুটা কমে। এমনটা মনে হলেও নবীন প্রজন্মের তাতে খুব বেশি সায় নেই। দেওয়ানহাটের প্রীতম রায়ের বক্তব্য, ‘স্ক্রিন যত বড় হবে, খেলা দেখে ততই মজা। তাই বাড়ির টিভিই আমার পছন্দ। যদিও বাবা-মায়ের দখলমুক্ত করে টিভিতে খেলা দেখা যথেষ্ট কঠিন।’
আর তা হবে নাই বা কেন? পশারিহাট এলাকার বধূ দীপালি রায়ের স্পষ্ট মন্তব্য, ‘সারাটা দিন সংসারের হাজারটা কাজ করে সন্ধ্যার সিরিয়ালগুলোই দেখি। একদিনের জন্যও তা বাদ দেওয়ার প্রশ্ন নেই।’ সকলের এই লড়াকু মনোভাব দেখে যেন বলাই যায়, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব রিমোটের দখলদারি।’