পলাশবাড়ি: কয়েকমাস আগে ঘর ভেঙেছিল বুনো হাতি। সেই রাতেই মহাকাল ঠাকুরের কাছে যোগেন্দ্রনগরের সরস্বতী বর্মন প্রার্থনা করেন, আর যাতে হাতি না ঢোকে বাড়িতে। আর হাতি ঢোকেনি। তাই এবার ৪০ বছর ধরে চলা গ্রামের মহাকালপুজোর প্রতিমা দান করেছেন সরস্বতীই। এদিকে, আর কয়েকদিন পরেই ভোট। রাস্তার ধারে টিনের চালা দেওয়া মহাকাল মন্দিরের পাশেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। ভোটের সময় যাতে এলাকায় হাতি না ঢোকে, ভোটকর্মীরা যাতে সুরক্ষিত থাকেন, এবারের মহাকালপুজোয় সেই প্রার্থনাও করলেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার দিনভর পুজোর পর সন্ধ্যায় নামকীর্তনও হয়।
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের পাশেই জলদাপাড়া বনাঞ্চল। এই এলাকায় প্রায় রাতেই বুনো হাতি ঢুকে পড়ে। কখনও ঘরবাড়ি ভাঙে। কখনও সাবাড় করে খেতের ফসল ও ঘরে মজুত রাখা ধান৷ তাই হাতিকে মহাকাল ঠাকুর হিসেবেই মানেন স্থানীয়রা৷ বুনো হাতির এমন আতঙ্কের জন্যই ৩৯ বছর আগে মেজবিল থেকে ভান্ডানিরহাটগামী জেলা পরিষদের রাস্তার পাশে যোগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা ঘনশ্যাম দেবনাথের উদ্যোগে চৈত্র মাসে মহাকালপুজো শুরু হয়েছিল। এখনও চলছে।
এখানে হাতির পিঠে বসে আছে শিব৷ তিনিই মহাকাল ঠাকুর। সকাল থেকেই দিনভর সেই পুজোয় মেতে ওঠে এলাকার আট থেকে আশি সবাই। পুজোর সরঞ্জাম জোগাড়ে সহযোগিতা করেন কলেজ ছাত্রী অর্চনা দেবনাথ, স্কুল ছাত্রী ধ্রুবা রায়দের মতো অনেকেই।
স্থানীয় গৃহবধূ কুমুদিনী রায়ের কথায়, ‘এই পুজোয় প্রসাদ হিসেবে পাঁচরকমের ফল, রান্না করা ভোগ, দই, চিঁড়ে, মুড়ি ও খিচুড়ি দেওয়া হয়। আর দেওয়া হয় ছিলিম ভর্তি গাঁজা। এলাকার মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় পুজোর খরচ হয়।’
ভোটের প্রসঙ্গও এবারের পুজোয় গুরুত্ব পেয়েছে। আরেক উদ্যোক্তা সরবালা দেবনাথ বললেন, ‘পাশেই তো ভোটগ্রহণ কেন্দ্র৷ আমরা শান্তিতে ভোট দিতে চাই। আবার বাইরে থেকে যে ভোটকর্মীরা আসবেন তাঁদেরও নিরাপত্তা প্রয়োজন। কারণ, কয়েকদিন আগেই এই এলাকায় হাতি ঢুকেছিল। তাই এদিনের পুজোয় মহাকাল ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করা হয় যাতে ভোটের সময় এলাকায় হাতি না ঢোকে।’
প্রতিবার পুজোর রাতে নামকীর্তনের আসর বসে পূজারির বাড়িতে৷ ওই কীর্তনের মাধ্যমেও এলাকায় যাতে হাতি না ঢুকে সেই প্রার্থনা করা হয়৷ এটাই এখানকার ব্যতিক্রমী নিয়ম বলে উদ্যোক্তা সুরোদিনী বর্মন জানিয়েছেন।