ময়নাগুড়িঃ (Mainaguri Khukshia Park) প্রায় এক দশক বেহাল থাকার পর অবশেষে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হল ময়নাগুড়ির খুকশিয়া উদ্যানের৷ সীমানা প্রাচীর তৈরীর পাশাপাশি উদ্যানটিকে নতুন করে সাজাবার উদ্যোগ নিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে বাংলা নববর্ষের আগেই বন্ধ হওয়া বোটিং ফের চালু হতে চলেছে খুকশিয়া উদ্যানে। নতুন প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় ময়নাগুড়িবাসী।
ময়নাগুড়ি শহরের অনতিদূরে খাগড়াবাড়ি এলাকায় পর্যটকদের কাছে এক সময়ে জনপ্রিয়তার শিখরে ছিল এই খুকশিয়া উদ্যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জৌলুস হারাচ্ছিল এই উদ্যান। দিনভর বোটিং-এর সঙ্গে সান্ধ্যকালীন আড্ডায় রঙিন আলোর ফোয়ারার হাতছানি ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সেই মুহুর্তে বছরের সব সময়ই ময়নাগুড়ির খুকশিয়া উদ্যানে মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকত। বিশেষ করে বিকেলের পর উপচে পড়ত ভিড় এই খুকশিয়া উদ্যানে।
বনদপ্তরের উদ্যান বিভাগ এবং জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদের তরফে ২০০৩ সালে ময়নাগুড়ি শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ খাগড়াবাড়ি গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছিল খুকশিয়া উদ্যান। জলাশয়ের পাশাপাশি এখানে পুকুরের মাঝে বোটিং সহ ছিল নানান খেলার সামগ্রী। আর ছিল প্রচুর ফুলের গাছ ও রঙিন মাছের অ্যাকোরিয়াম। কিন্তু করোনার সময় দীর্ঘ দিন পার্ক বন্ধ থাকার কারণে উদ্যানের রঙিন আলোর ফোয়ারার নানা সামগ্রী। এরপরে করোনার আবহ কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর উদ্যান খুলে গেলেও আগের রূপে ফিরতে পারেনি খুকশিয়া পার্ক। এছাড়া এক দশকের বেশী সময় ধরে উদ্যানে বোটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুণ বোট গুলো অবস্থাও বেহাল। পরে পরে নষ্ট হচ্ছে বোটগুলি। পাশাপাশি পার্কের সামনে থাকা কাঠের সেতুটিরও বেহাল অবস্থা। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সেতু থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছিল কাঠ সহ নানা সামগ্রী।
উদ্যানে দীর্ঘ সময় ধরে দেখভালের দায়িত্বে থাকা মহিলা কর্মী মিলন রানী সরকারের কথায়, একসময় ময়নাগুড়িবাসীর কাছে জনপ্রিয়তার শিখরে ছিল খুকশিয়া উদ্যান। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সেভাবে উদ্যানমুখী হতেন চাইতেন না অনেকেই। হাতে গোনা কিছু সংখ্যক মানুষ আসছিলেন। তবে এবার উদ্যানটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বোটিং চালু হলে আগের মতো ভিড় উপচে পরবে উদ্যানে।
ময়নাগুড়ির এক বাসিন্দা অভিজিৎ দাস জানান, “আগে প্রায়শই ছুটির দিন খুকশিয়া উদ্যানে সপরিবারে বেড়াতে যেতাম। বোটিং এর সুব্যবস্থা ছিল। পুনরায় তা চালু হয় তাতে আগের মতো জনপ্রিয়তা লাভ করবে এই উদ্যান৷ আরেক বাসিন্দা তমাল ঘোষের কথায়, “ছেলেকে নিয়ে আগে ছুটির দিন বিকেলে এখানে আসতাম, কিন্তু আস্তে আস্তে জৌলুস হারায় এই উদ্যান। তবে উদ্যানের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে সেটির সৌন্দর্যায়ন করলে আরও জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং আরও বেশী মানুষ আসবে বেড়াবার জন্য”।
খাগড়াবাড়ি এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সীমা রায় বলেন, খুকশিয়া উদ্যান ময়নাগুড়ি বাসীর কাছে অত্যন্ত আকর্ষনীয়, উদ্যানকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। বোটিং চালু করার জন্য নতুন দুটো বোট আনা হচ্ছে, আশা করা যাচ্ছে নববর্ষের মধ্যেই তা চালু করা হবে। ময়নাগুড়ি পর্যটন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল শীল বলেন, পরিবেশ বান্ধব উদ্যান গড়ে তোলার পাশাপাশি পার্কটিকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য যে কাজ শুরু হয়েছে তা সম্পন্ন হলে খুকশিয়া উদ্যান ফিরে পাবে পূর্বের গরিমা।