শিলিগুড়ি: শূন্য হাতে আর কতদিন? উত্তরবঙ্গের জন্য বারবার ‘কল্পতরু’ হওয়ার পরেও তার প্রতিফলন ভোটবাক্সে না পড়ায় তিনি যে হতাশ, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা শনিবার প্রকাশই করে ফেললেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে শোনা গেল, ‘জীবনটা দেওয়াই শুধু বাকি।’
২০১৪ সালেও তৃণমূল উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের মধ্যে চারটি তৃণমূল দখল করেছিল। কিন্তু ২০১৯-এ একটি আসনেও তৃণমূল জিততে পারেনি। এদিন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভার জাবরাভিটায় জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় মমতা বলেন, ‘কী করিনি উত্তরবঙ্গের জন্য? আগে কী ছিল শিলিগুড়ি, কী ছিল ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি? কী ছিল জলপাইগুড়ি? আমরা দীর্ঘদিনের দাবি মতো উত্তরবঙ্গে রাজ্য সরকারের সচিবালয় তৈরি করেছি। গজলডোবায় ভোরের আলো করেছি। জয়ী সেতু সহ প্রচুর সেতু করেছি। তার পরেও বারবার বিজেপির ভোটপাখিরা এসে ভোট নিয়ে চলে যায়? আমার অপরাধ কী বলুন?’
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে গৌতম দেবের জন্য আমি এখানে প্রচারে এসেছিলাম। প্রচুর ভিড় দেখে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম গৌতম হেরে গেল। জনসভায় ভিড় হচ্ছে, অথচ আমরা ভোট পাচ্ছি না কেন? তাঁকে বিশ্বাস করে, তাঁর দিকে তাকিয়ে যেন মানুষ এবার তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেন, মুখ্যমন্ত্রী সেই আবেদনও করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের আলাদা কোনও পরিবার নেই। আপনারাই আমার পরিবার।’
মমতা এদিন ইস্টার্ন বাইপাসের জাবরাভিটা জুনিয়ার হাইস্কুল মাঠে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে জনসভা করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি হেলিকপ্টারে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে নিয়ে সভাস্থল সংলগ্ন ময়দানে নামেন। সভামঞ্চে উঠে তিনি সকলের সঙ্গে পরিচয়পর্ব সারার মাঝেই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি রোমা রেশমি এক্কার কপালে চুম্বন করে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। পরে রোমা বলেন, ‘এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে ওঠার সুযোগ পেয়েছিলাম। এদিনই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হল। তিনি বললেন, ‘খুব ভালো কাজ হচ্ছে। আরও ভালোভাবে কাজ করে যাও।’
প্রায় ৪২ মিনিটের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বেশিরভাগ সময়টাই কেন্দ্রের শাসক বিজেপিকে দুষেছেন। তাঁর অভিযোগ, সিএএ, এনআরসির নামে কেন্দ্র নাগরিকত্ব কাড়ার ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রে মানুষ যাতে পা না দেন মমতা সেই পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘মোদিকি গ্যারান্টি আসলে জুমলা গ্যারান্টি। বাংলাকে কিছু না দেওয়ার গ্যারান্টি। ‘আমরা প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তকে বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো একবারও ওই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ালেন না, ওঁদের নিয়ে কিছু বললেন না। শুধু ভোটের সময় ভোটপাখি হয়ে এসে ভোট নিয়ে চলে যায়।’
দু’দিন আগে একটি অনুষ্ঠান থেকে চালসায় ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় দেখে চোর চোর স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘সব চোর, ডাকাত তো বিজেপিতে। আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। তবে, বাংলা কারও কাছে মাথানত করবে না। আমরা ১০০ দিনের কাজের টাকা দিয়েছি। দিল্লির উপরে আপনাদের নির্ভর করে থাকতে হবে না।’