পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: শুধু নাট্যকর্মী ও নাট্যপ্রেমী দর্শক নয়। মন্মথ রায় নামটির সঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রতিটি মানুষ পরিচিত। তাঁর নাট্য প্রতিভা জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্য থেকে জাতীয় স্তরেও সমাদৃত। বাংলা নাটকের জগতে এক অঙ্ক বিশিষ্ট ছোট নাটকের ধারা নিয়ে এসে তিনি একাঙ্ক নাটকের জনক হিসেবে খ্যাত। অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের গালা গ্রামে শৈশবের ছয় বছর কাটলেও তাঁর নাট্যচর্চা ও জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে বালুরঘাটে। শহরের রথতলা এলাকায় তাঁর বাড়ি এখন নাট্যচর্চার কেন্দ্র ও সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে ছবি প্রদর্শনী, বৈঠক আয়োজিত হয় ঠিকই, কিন্তু পাশেই যে তাঁর নাট্যচর্চার ইতিহাসের বিপুল সম্ভার রয়েছে তা অনেকের কাছেই এখনও অজানা। তাঁর এই বাসভবন সাধারণ মানুষের স্বার্থে পুরসভার কাছে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এখানে শহরে তাঁর প্রথম আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এই সংগ্রহশালায় তেমন আনাগোনা দেখা যায় না কারোরই।
মন্মথ রায়ের তত্ত্বাবধানে বালুরঘাটে নাট্যচর্চার জন্য প্রথমে এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল ক্লাব, যা স্বাধীনতার পরে বালুরঘাট নাট্যমন্দির নামে মঞ্চ তৈরি হয়। এর পেছনেও রয়েছে রোমাঞ্চকর ইতিহাস। যার সাক্ষী থেকে গিয়েছে এই শহর। নাটকের যে বীজ তিনি এই শহরের মাটিতে বুনে গিয়েছিলেন, তা আজও এই প্রজন্মের নাট্যকর্মীরা দক্ষতার সঙ্গে লালন করে চলেছেন। বালুরঘাট যেখানে বরাবরই নাটকের শহর হিসেবে পরিচিত। সেখানে একাঙ্ক নাটকের জনক মন্মথ রায়ের সংগ্রহশালা এমনভাবেই মানুষের নজরের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। এই নিয়ে প্রশাসন বা পুরসভার তরফেও প্রচার লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু নাট্য গবেষক ও নাট্যকর্মীদের কাছে এই সংগ্রহশালা ব্যাপক জ্ঞানের ভাণ্ডার হিসেবে উঠে আসতে পারত। তাঁর বাসভবনের এক কোনায় আজও সংগ্রহশালা দাঁড়িয়ে রয়েছে। নাট্যচর্চার কর্মযজ্ঞে বিলীন হয়ে যাওয়া মন্মথ রায় হয়তো এখনও অপেক্ষা করেন সংগ্রহশালায় এসে জ্ঞানপিপাসু মানুষ তাঁর কর্মকাণ্ড খুটিয়ে দেখবেন।