জাকির হোসেন, ফেশ্যাবাড়ি: মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের ঝাউগুড়ি গ্রামের কৃষক মজির হোসেনের বাড়ি যেন সুরম্য উদ্যান। নানা বাহারি ফুলে তিনি ১০ বিঘা জমির ওপর সাজিয়ে তুলেছেন স্বপ্নের বাড়ি। চারপাশে ঝাউ, পাতাবাহার, ঝুপি গাছ, কাগজ ফুল, গছর, রঙ্গন সহ মন জুড়ানো অসংখ্য গাছগাছালি। সুন্দরভাবে সাজানো ঘরের বারান্দায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, এপিজে আব্দুল কালাম, স্বামী বিবেকানন্দ সহ অন্য মনীষীদের ছবি ও বাণী টাঙানো। দুপুরে গাছের ডালে কোকিলের ডাক, পাখিদের কলরব মন জুড়িয়ে দেয়। বসন্ত বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ, সারিবদ্ধ গাছগাছালি দেখে ক্ষণিকের জন্য মনে হয় স্বপ্নের দেশে রয়েছি। ফেশ্যাবাড়ি সংলগ্ন নিশিগঞ্জ-প্রেমেরডাঙ্গা পাকা সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলেই মজিরের শখের বাগানবাড়ি। এই বাড়িটিই এখন সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
সবুজের বিশাল প্রান্তরে সুসজ্জিত মজিরের বাড়ি। সারিবদ্ধ সুপারি গাছ, ঝাউ ও পাতাবাহার দিয়ে রাস্তার দু’ধার সেজে উঠেছে। বসন্তের বাহারি ফুল যেন স্বাগত জানায়। শনিবার তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল প্রখর রৌদ্রে গাছগাছালি পরিচর্যায় ব্যস্ত মজির। প্রায় দেড় দশক ধরে তিল তিল করে নিজের হাতে বাগানকে সাজিয়েছেন তিনি। সেই সাজানো বাগান দেখতে এখন সকাল-সন্ধ্যা মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে। তাতে অবশ্য কৃষক দম্পতির মনে বিন্দুমাত্র বিরক্তি নেই। অচেনা মানুষদের দেখে রোজকার ক্লান্তি দূর করেন তাঁরা। মজিরের কথায়, ‘১০ বিঘা জমির ওপর বাড়ির চারপাশ সাজিয়েছি। একান্তই শখের বশে করা। চারপাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো প্রায় সাতশো সুপারি গাছ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কৃষিপণ্য ও সুপারি বিক্রি করে সিংহভাগ টাকা এই বাগানের পেছনেই খরচ করি।’
স্ত্রী সালমা বিবি ও কন্যা জেসমিন খাতুনকে নিয়েই মজিরের পরিবার। তাঁর শখের বাগান পরিচর্যার কাজে হাত লাগান তাঁরাও। সালমার বক্তব্য, ‘বাড়ি সাজিয়ে তোলাই স্বামীর শখ। একাজে আমরা তাঁকে সাহায্য করি।’ জেসমিন বলেন, ‘যখন বাইরে থেকে লোকজন পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে প্রশংসা করে তখন আনন্দে মন ভরে যায়।’
বাড়ির এক কোণে থাকা শৌচাগারটি আকর্ষণীয়ভাবে বাঁশ ও পাটকাটি দিয়ে বাংলোর আদলে গড়া হয়েছে। তাতে অবশ্য অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের জন্য রয়েছে বাইক, গাড়ি রাখার ব্যবস্থা। তাঁদের বিশ্রামের জন্য অর্কেরিয়া গাছতলায় একটি বাঁশের মাচা করেছেন। সেখানে স্থানীয়রাও মাঝেমধ্যে গিয়ে গল্পগুজব করেন। রাতে ঘোরাঘুরি করতে পর্যটকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেজন্য গোটা বাড়িতে আলোর ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।